শুরু হয়েছে রহমত, বরকত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান। দেশের আকাশে রমজানের চাঁদ দেখা যাওয়ায় শনিবার রাতে সেহ্রি খেয়ে রোববার থেকে রোজা শুরু হয়েছে। গত রাতেই মসজিদে মসজিদে হয়েছে তারাবিহ্র নামাজ। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গত দুই রমজান পালন করেছেন দেশবাসী। এবার একটু ভিন্ন আবহে এসেছে সিয়াম সাধনার মাস। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কমে গেছে সংক্রমণ। তাই উঠে গেছে সব ধরনের বিধি-নিষেধ।
কোনো ধরনের বিধি-নিষেধ ছাড়াই গত রাতে তারাবিহ্র নামাজ হয়েছে সারা দেশের মসজিদে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও এবার রমজানে মানুষের সঙ্গী হচ্ছে নানা দুর্ভোগ। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় মানুষদের এই রমজানেও দুর্ভোগ সঙ্গী করেই চলতে হবে। কারণ বাজারে কোনো সুখবর নেই। ইতিমধ্যে রমজান সংশ্লিষ্ট সব পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফে নানা উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এসব উদ্যোগের দৃশ্যমান অগ্রগতি খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। রমজান শুরুর আগে থেকেই রাজধানীতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট। দিনের বেশির ভাগ সময় রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে লেগে থাকছে অসহনীয় যানজট। বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণে বিশ্বে শীর্ষে থাকা ঢাকার এই যানজটের চিত্র এখন প্রতিদিনের। সরকারি ছুটির দিন শুক্র এবং শনিবার যানজটের মাত্রা যেন বেড়ে যায়। এই দুইদিনও প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে স্বস্তি মিলে না নগরবাসীর। হঠাৎ করেই নগরীতে কেন এত যানজট- এর কোনো উত্তর মিলছে না। তবে নগর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগর প্রশাসনের জবাবদিহিতার অভাব, অপরিকল্পিত উন্নয়ন কাজ এবং নগর পরিবহনে বিশৃঙ্খলা বাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন চাইলেও তড়িঘড়ি পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব নয়। নগরীর এমন দূষণ আর অব্যবস্থাপনার কারণে গত মাসের মধ্য ভাগ থেকে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব। গত মাসে গড়ে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে আইসিডিডিআর,বি হাসপাতালে। যেসব এলাকায় ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে বেশি সমস্যা ওই এলাকার নাগরিকরাই ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে হাসপাতালে আসা রোগীর তথ্য বলছে। রমজানে তাপপ্রবাহ বাড়লে ডায়রিয়া পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
রাজধানীর বাসিন্দাদের জন্য বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অসহনীয় যানজট। করোনার বিধি-নিষেধের সময় যানজট কিছুটা কম হলেও এখন তা অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। এই অবস্থার মধ্যে বিভিন্ন সড়কে চলছে উন্নয়ন কাজ। এসব কাজের কারণে কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ থাকছে বা সরু হয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। এতে দিনভর যানজট লেগে থাকছে। বিশেষ করে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর সড়ক, মিরপুর-১২ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারীদের প্রতিদিনই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে। এই অবস্থায় রমজানে অফিস শেষে ইফতারের আগে বাসায় ফেরা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষ।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্র্ধ্বগতি দীর্ঘদিন থেকেই ভোগান্তিতে ফেলেছে মানুষকে। গত কয়েক মাস ধরে ধারাবাহিকভাবেই বাড়ছে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এর সঙ্গে মাছ, মাংস, শাক-সবজির দামও অনেকটা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সারা দেশে ন্যায্যমূল্যে টিসিবি’র মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে খাদ্য সরবরাহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও অভিযোগ এসেছে নিম্ন্ন আয়ের অনেক মানুষ এই সুবিধা না পেলেও দলীয় নেতাকর্মী এবং এই সুবিধার প্রয়োজন নেই এমন অনেকে টিসিবি’র পণ্যের জন্য কার্ড পেয়েছেন। দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার মনিটরিংয়ের কথা বলা হলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।
দাম বেড়েছে ইফতার তৈরির উপকরণের: ওদিকে রমজান শুরুর ঠিক আগ মুহূর্তে বেড়েছে ইফতার তৈরির বিভিন্ন উপকরণের দাম। রোজা শুরু হওয়ার ঠিক একদিন আগেই বেড়েছে বেগুন, শসা, লেবু ও ধনেপাতার দাম। সরজমিন কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগেও যে লেবু প্রতি হালি বিক্রি করা হতো ২৫ থেকে ৪০ টাকায়, রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ। অন্যদিকে এক কেজি বেগুন মানভেদে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। পণ্যটির দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ।
রোজার আগমুহূর্তে লাফিয়ে বেড়েছে শসার দামও। ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া শসা কয়েক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশ। ধনেপাতা প্রতি কেজি ১২০ থেকে বেড়ে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বেগুন, শসা ও পিয়াজের কোনো ঘাটতি না থাকলেও লেবু ও ধনেপাতার সরবরাহ আগের চেয়ে একটু কমেছে। এদিকে রোজার আগে এই দুই পণ্যের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। যার ফলে দামও বেড়েছে।