সেহরির জরুরি কয়েকটি মাসআলা

সেহরি খাওয়া সুন্নত। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়, এক ঢোক পানি পান করলেও সেহরির সুন্নত আদায় হবে।

হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা সেহরি খাও। কেননা সেহরিতে বরকত রয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং;১৯২৩)

অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ কাজ। সুতরাং তোমরা তা পরিত্যাগ করো না। এক ঢোক পানি দিয়ে হলেও সেহরি করো। কারণ যারা সেহরি খায় আল্লাহতায়ালা তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন এবং ফেরেশতারা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মুসনাদে আহমাদ ৩/১২; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস ৯০১০; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৩৪৭৬)

হজরত আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমাদের এবং আহলে কিতাব (ইহুদি ও নাসারা) এর রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া। (আমরা সেহরি খাই আর তারা সেহরি খায় না।) সহিহ মুসলিম হাদিস নং-১০৯৬

কী দ্বারা সেহরি খাবেন?

প্রত্যেক ব্যক্তি আপন রুচি অনুসারে সেহরি খাবে। চাই তা ভাত হোক কিংবা রুটি বা অন্য কিছু। পেট ভরে খাওয়া জরুরি নয়। অতএব কেউ যদি এক-দুই লোকমা খাবার কিংবা দুই-চারটি খেজুর খেয়ে নেয় অথবা শুধু কিছু পানি পান করে নেয়, তা হলেও সে সেহরির সওয়াব পেয়ে যাবে। (আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৫)

সেহরি খাওয়া ব্যতীত কি রোজা হবে না?

অনেক সাধারণ মুসলমান মনে করে যে, সেহরি না খেলে রোজা সহিহ হবে না। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। তবে সেহরি না খেলে সেহরির সওয়াব পাওয়া যাবে না। কিন্তু রোজা সহিহ হয়ে যাবে। (ফাতাওয়া আলমগিরি-১/১৯৪)

কখন সেহরি খাবেন?

রাতের শেষভাগে সেহরি খাওয়া উত্তম। অর্থাৎ সতর্কতামূলক সময় হাতে রেখে সুবহে সাদিকের পূর্ব-নিকটবর্তী সময়ে সেহরি খাওয়া উত্তম। তবে এ পরিমাণ বিলম্বিত করবে না যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয় এবং রোজা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। (হেদায়া ১/২২৫)

সেহরির ব্যাপারে বাড়াবাড়িও নয় ছাড়াছাড়িও নয়

অর্ধরাতে সেহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়া, এ রকম বাড়াবাড়িও উচিত নয়। আবার এই পরিমাণ বিলম্ব করে সেহরি খাওয়া যে, সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়, এ ধরনের ছাড়াছাড়িও ঠিক নয়। (হেদায়া- ১/২২৫)

কখন সেহরি খাওয়া মাকরুহ?

সুবহে সাদিক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ তৈরি হলে সেহরি বা কোনো কিছু পানাহার করা মাকরুহ। তা সত্ত্বেও যদি কিছু খেয়ে নেয় আর ওই সময় বাস্তবেও সুবহে সাদিক হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে ওই রোজা সহিহ হবে না। তার কাজা করে নেবে। আর যদি সুবহে সাদেক হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ রয়েই যায়, নিশ্চিতরূপে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারা যায় তা হলেও সতর্কস্বরূপ ওই রোজার কাজা করে নেবে। (হেদায়া- ১/২২৫)

সেহরির পর কি চা-পান খেতে পারবে?

হ্যাঁ, সেহরি খেয়ে চা-পান ইত্যাদি খেতে পারবে। তবে এই পরিমাণ বিলম্ব করে খাবে না যে, রোজা সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। চা-পান ইত্যাদি খাওয়ার পর সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই কুলি করে মুখ পরিষ্কার করে নেবে। (তানভী রহ. কৃত যাওয়ালুস সুন্নাহ্ -১৩)

সেহরি খাওয়ার পর স্ত্রী সহবাস করা যাবে কি?

সেহরি খাওয়ার পর স্ত্রী সহবাস করা যাবে। তবে তা সুবহে সাদিক হওয়ার আগেই শেষ করতে হবে এবং গোসল করে যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে।

মহান আল্লাহ বলেন, রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্মপ্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদের ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। (সুরা বাকারা-১৮৭)

লেখক: মুফতি ও মুহাদ্দিস শেখ জনূরুদ্দীন (র.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা, চৌধুরীপাড়া, ঢাকা।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ