মহিলা দলের বিশ্ব নারী দিবসের র‌্যালিতে পুলিশের বাধা

পুলিশি বাধায় বিশ্ব নারী দিবসের র‌্যালি করতে পারেনি ‘জাতীয়তাবাদী মহিলা দল’।

শুক্রবার সকালে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের পর র‌্যালি বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। নেতাকর্মীরা মুহুরমুহু শ্লোগান দিয়ে পুলিশের বাধার প্রতিবাদ জানায়। পরে পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে। একপর্যায় নারীকর্মীরা ৪ থেকে ৬ মিনিট শ্লোগান দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে চলে যায়।

মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আজকে একটা নারী দিবস। সেখানে পুলিশ নারীদের একটা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে দিলো না। দেশের নারী সমাজ কেমন আছে, এটাই তার প্রমাণ। আজকে আমাদের শান্তিপূর্ণ র‌্যালি পণ্ড করে দেয়ার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

পুলিশের মহিলা শাখার এডিসি ফারজানা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনারা সমাবেশ করেছেন। বক্তব্য দিয়েছেন। সেখানে আমরা বাধা দেয়নি। যতটুকু পারমিশন ছিল, সেটা আমরা করতে দিয়েছি।’

র‌্যালি কেনো করতে দিলেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনাদের বক্তব্য দেয়ার পারমিশন ছিল। বক্তব্য দিয়েছেন। আজকে জুম্মার সময় গাড়ি চলাচল করছে। এই র‌্যালি করতে দিলে যানবাহন চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হবে। সেজন্য আমরা সেটা করতে দেয়নি।’

সকাল সাড়ে ১০টায় নয়া পল্টনে বিএনপির নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতাকর্মীরা সমবেত হয়।

সেখানে বিশ্ব নারী দিবসে দেশের নারী সমাজকে অভিনন্দন জানিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আজ দেশের নারীরা অবহেলিত, নির্যাতিত। আজকে তাদের দুরাবস্থার কথা বলতে হয়… বাংলাদেশ আজকে একটা ধর্ষণের দেশে পরিণত হয়েছে… এমন কোনো দিন নেই, এমন কোনো মাস নেই, এমন কোনো সপ্তাহ নেই, যখন দেশের নারীদের ওপর নির্যাতন চলছে, ধর্ষণ চলছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘তার চেয়ে বড় দুঃখের ও কষ্টের বিষয় হচ্ছে, এই ধর্ষণের ব্যাপারে কোনো বিচারের প্রয়োগ আমরা দেখতে পারছি না। কারণ এই ধষর্ণের সাথে ক্ষমতাসীনদের অনেকে জড়িত। তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা জড়িত। আরো দুঃখের বিষয় এই বিষয়ে যারা নারীবাদী হিসেবে পরিচয় দেন, যারা নারীদের পক্ষে কাজ করে বলে বলেন, তারা খুব একটা সোচ্চার হচ্ছেন না। কারণ, তারাও ভয়-ভীতির পরিবেশের মধ্যে আছে। নারীদের ওপর ধষর্ণের বিষয়ে কেউ মুখ খুলে কথা বলছে না।’

তিনি বলেন, ‘সারা দেশে ভয়-ভীতির একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না। বাংলাদেশে দখলের রাজনীতি চলছে, সিলেকশনে রাজনীতি চলছে। গতকাল হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ পর্যন্ত যে দখল প্রক্রিয়া চলেছে, তা আপনারা ইতোমধ্যে দেখেছেন। আইনজীবীদের ভোট হচ্ছে। ওখানে দখল করার কী আছে? সারা দেশে জনগণের ভোট তো দখল হয়ে গেছে। এখন আইনজীবীদের ভোটও দখল করতে হবে। এখন ব্যবসায়ীদের ভোটও দখল করতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে এই যে দখলের প্রতিক্রিয়া এটা শুধু নারী নয়, বাংলাদেশের নাগরকিররা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদের সব অধিকার থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে।’

এই অবস্থার উত্তরণে নারী সমাজকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘আগামী দিনের বাংলাদেশ যদি আমরা নারীদের ক্ষমতায় রাখতে চাই প্রথমে বাংলাদেশের নাগরিকদের ক্ষমতায়ন করতে হবে। দেশের নাগরিকরা যদি অধিকারহীন হয়ে যায়, ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয়, তাহলে নারীদের ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না, কারো ক্ষমতায়নের সুযোগ থাকবে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘একমাত্র দেশের সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকার, দেশের মানুষের নাগরিক অধিকার যদি ফিরে পাওয়া না যায়, তাহলে এখন যে অবস্থা আছে সেখান থেকে উঠে আসার কোনো সুযোগ নেই। তাই নারী-পুরুষ সবাই মিলে একত্রে প্রথমে আমাদেরকে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।নারীদের ক্ষমতায় সেখান থেকে শুরু করা যাবে।’

বাংলাদেশে নারীদের ক্ষমতায়নে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমরা চাই, আমরা নারী সমাজ মিলে যেন দেশটা, সমাজটাকে বদলে দিতে পারি। যে সমাজে আমরা রুখে দাঁড়াতে পারব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারব, মাথা সকলে উঁচু করে দাঁড়াতে পারব এবং নারীদের পক্ষে দাঁড়াতে পারব সেই সমাজ চাই আমরা। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন। তিনি যে আন্দোলন করতেন তার একটাই দাবি ছিল, দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও।’

তিনি আরো বলেন, ‘আজকে আমরা কোথায় আছি? আমরা দেশকে বাঁচাতে পারছি না, মানুষও বাঁচাতে পারছি না। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। আসুন আমরা আজকের দিনে সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আমরা দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব। আমরা নারী আমরাই পারি। আসুন আমরা সকলে মিলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে এমন প্রতিজ্ঞা করি যেন দেশনেত্রীর মতো আমরাও বলতে পারি দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও।’

দ্রব্যমূল্যের ঊধর্বগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের এরকম দাম অতীতে কখনো ছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল, স্থিতিশীল ছিল।’

দেশের বর্তমান অবস্থা পরিবর্তনে মহিলা দলের কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান রেখে মহিলা দলের প্রধান বলেন, ‘আজকে আমরা শপথ নিতে চাই, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, নারীর অধিকার ফিরিয়ে আনব, দেশ বাঁচাব, মানুষ বাঁচাব, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব।’

বিশ্ব নারী দিবসে মহিলা দলের র‌্যালির এই অনুষ্ঠানে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনে বিশ্ব নারী দিবসে আমরা নারীরা এখনে যতজন উপস্থিত হয়েছি, তার চেয়ে দেখুন কত বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এখান থেকে নাইটেঙ্গল রেস্তোরাঁ পর্যন্ত। কত খানি ভয় পায় ওরা। আমরা যদি পাঁচজন নারী থাকতাম, সেখানে ৫০০ পুলিশ মোতায়েন থাকতো। এখানেই আমাদের বিজয়। কেনো ভয় পায়? কারণ আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, সত্য কথা বলি।’

মহিলা দলের আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, নেওয়াজ হালিমা আরলি, নায়েবে ইউসুফ, শাহানা আখতার সানু, রুমা আখতার প্রমুখ নেতারা বক্তব্য রাখেন।

বিশ্ব নারী দিবসে মহিলা দলের র‌্যালি উপলক্ষে সকাল থেকে ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রায়ট কার, জলকামানের গাড়িও ছিল সেখানে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp
Share on linkedin
LinkedIn
Share on print
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ