বাংলাদেশের মানুষের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে গড় বয়স সাধারণত ৬০ বছর। কিন্তু জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরিসংখ্যান বলছে, ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি নারী-পুরুষের ফুসফুস ক্যানসার বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে।
ওই হাসপাতালে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ক্যানসার স্টাডি গ্রুপ পরিচালিত ‘ডেমোগ্রাফিক ডিফ্রেনশিয়ালস অব লাংস ক্যানসার সারভাইবাল ইন বাংলাদেশি পেশেন্ট’ শীর্ষক এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।
এ গবেষণায় যুক্ত ছিলেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইসস্টিটটিউট ও হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, ডা. এটিএম কামরুল হাসান, ডা. নাজরীনা খাতুন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক ইশরাত নূর হৃদি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক মামুন অর রশীদ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিনের চিকিৎসক সৈয়দ মোহাম্মাদ আরিফুল ইসলাম, অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড প্রাইভেট মেডিসিন বিভাগের গবেষক ডা. নাজমুল করিম।
গবেষণা সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ১ হাজার ৮৬৮ জন ফুসফুস ক্যানসার রোগীর ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ এবং ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ নারী। ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার গড় বয়স ছিল ৬০ বছর। তবে ৫০ বছরের নিচে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর হার ছিল ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে প্রতীয়মান হয়, অপেক্ষাকৃত কম বয়সিদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এছাড়া ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ রোগী রোগ নির্ণয়ের সময় থেকেই অপুষ্টিতে ভুগছিলেন। এছাড়া ৬৬ দশমিক ২ শতাংশ রোগীর কোনো আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল না।
গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ রোগীর ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ প্রতি মাসে পারিবারিক আয় ছিল ১০ হাজার টাকার নিচে। সামগ্রিকভাবে ৮০ শতাংশেরও বেশি রোগী ছিলেন ধূমপায়ী। এছাড়া প্রায় অর্ধেক রোগী ধোঁয়াহীন তামাক ব্যবহারকারী ছিলেন। এদের মধ্যে ৪৪ দশমিক ৩ শতাংশ রোগীরা উভয় ধরনের তামাক সেবনে অভ্যস্ত ছিলেন। স্বভাবতই পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি মাত্রায় তামাকজাত দ্রব্যে আসক্ত ছিলেন।
এছাড়া ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ রোগীর ফুসফুস ক্যানসারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্রনিক (দীর্ঘ মেয়াদি) রোগ যেমন-উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদিতে ভুগছিলেন। রোগ নির্ণয়ের সময় দুই-তৃতীয়াংশ রোগীদের কার্যক্ষমতা স্বাভাবিকের অর্ধেকে নেমে আসে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগী অর্থনৈতিক কিংবা শারীরিক অক্ষমতার কারণে চিকিৎসা নেননি অথবা সম্পূর্ণ করতে পারেননি। বেশিরভাগ রোগীই শুধু কেমোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা নিয়েছেন। ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ রোগী কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি উভয় চিকিৎসা নিতে সক্ষম হয়েছেন। ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে যাদের বয়স ৫০ বছরের নিচে ছিল, যারা তুলনামূলক শিক্ষিত ছিলেন, তারা শারীরিকভাবে সুস্থ ছিলেন। এছাড়া যারা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত ছিলেন না অথবা যারা চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি নিয়েছেন, তারাই বেশি দিন বেঁচে ছিলেন।