আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আজ (রোববার) থেকে শুরু করেছে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রথম দিন শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে এই সংলাপ শুরু হয়েছে। শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিতে সংলাপে হাবিবুল আউয়াল কমিশনের প্রথম বৈঠকে ৩০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ইসির ডাকে সাড়া দিয়ে সংলাপে অংশগ্রহণ করেছেন মাত্র ১৩ জন শিক্ষাবিদ। সাড়া দেননি ১৭ জন শিক্ষাবিদ।
রোববার বিকাল ৩টায় নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে ইসির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আজকের সংলাপে যে ১৩ জন শিক্ষাবিদ অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১১ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। তারা হলেন- অধ্যাপক সাদেকা হালিম, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার, অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী, অধ্যাপক মফিজুল ইসলাম, অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, ড. আখতার হোসেন, অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অধ্যাপক লায়লাফুর ইয়াসমিন।
যে ৩০ জন শিক্ষাবিদকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি, তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, একই বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান; অধ্যাপক এম জাফর ইকবাল, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এম আনোয়ার হোসাইন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ, অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন, অধ্যাপক এম আবুল কাশেম মজুমদার; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম; লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. মোহাব্বত খান, অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেম; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম; বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ; বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম, ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম মফিজুল ইসলাম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী, ইউল্যাবের জেনারেল এডুকেশন বিভাগের অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস হাসান ও তাসনিম আরিফা সিদ্দিকী; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল আলম ও অধ্যাপক আল মাসুদ হাসানুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াহিয়া আখতার।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত কমিশনের আনুষ্ঠানিক কোনো সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশনাররা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সংলাপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে মতামত নেওয়া হবে এই সংলাপে।
নির্দিষ্ট এজেন্ডা ছাড়াই এই সংলাপ শুরু করেছে কমিশন। এরপর ২২ মার্চ নাগরিক সমাজের সঙ্গে সংলাপে বসবে। পরে রাজনৈতিক দল, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গেও সংলাপ হবে। সংলাপে উঠে আসা মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর এত অল্প সময়ের মধ্যে সংলাপে বসার উদ্যোগ নিল এই কমিশন। নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ ২০১৭ সালে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সংলাপে বসেছিল। সে বছর ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসার মধ্য দিয়ে কার্যত ওই সংলাপ শুরু হয়েছিল। এরপর ৪০টি রাজনৈতিক দল, নারী নেতৃত্ব, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমের সঙ্গেও বসেছিল তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার কমিশন।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। পরদিন শপথ নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম অফিস করে হাবিবুল আউয়ালের কমিশন। সবার সঙ্গে মতামত নিয়ে সেই আলোকে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করবে সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি।