ইউক্রেন দখলদারদের জমি উপহার দেবে না: জেলেনস্কি

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আগামী ১৫ আগস্ট আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই সামাজিক মাধ্যমে এই ঘোষণা দিয়েছেন। পরে ক্রেমলিন থেকেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই বৈঠকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি উপস্থিত থাকবেন কিনা, তা জানা যায়নি। যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে কিছু অঞ্চল ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিলেও তা খারিজ করে দিয়েছেন জেলেনস্কি। তাঁর ভাষ্য, ইউক্রেনের জনগণ তাদের জমি দখলদারদের উপহার দেবে না।

বিবিসি জানিয়েছে, ১৫ আগস্ট দুই নেতার বৈঠকের বিষয়টি প্রথমে ট্রাম্প নিজেই সামাজিক মাধ্যমে জানান। পরে ক্রেমলিনের এক মুখপাত্রও সেই তথ্য নিশ্চিত করেন। তুলনামূলকভাবে রাশিয়ার কাছাকাছি হওয়ায় দুই নেতার বৈঠকের স্থান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরাঞ্চলীয় অঙ্গরাজ্য আলাস্কা ‘বেশ যৌক্তিক’ মন্তব্য করেন ক্রেমলিনের ওই মুখপাত্র।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনকে তার কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে– এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। এর কয়েক ঘণ্টা পরই রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের স্থান ও তারিখ জানা যায়।

শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি এমন ভূখণ্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন, যা নিয়ে সাড়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলছে। অনেক রুশ নিহত হয়েছে। অনেক ইউক্রেনীয় প্রাণ হারিয়েছে। এটা খুবই জটিল। আমরা কিছু ফিরিয়ে আনতে যাচ্ছি। কিছু অদলবদল করতে যাচ্ছি। উভয়ের ভালোর জন্যই কিছু ভূখণ্ডের বিনিময় হবে।’ তবে এই প্রস্তাবনা নিয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলেননি ট্রাম্প।

আলোচনার সঙ্গে জড়িত সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, হোয়াইট হাউস ইউরোপীয় নেতাদের একটি সমঝোতায় রাজি করানোর চেষ্টা করছে। এই সমঝোতা অনুসারে, রাশিয়া পুরো দোনবাস অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ পাবে এবং ক্রিমিয়াতেও তাদের দখল বহাল থাকবে। অন্যদিকে, প্রস্তাবিত সমঝোতা অনুযায়ী খেরসন ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চল তারা ছেড়ে দেবে।

এর আগে শুক্রবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছিল, পুতিন সম্প্রতি ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে মস্কোতে এক বৈঠকে একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তবে এটা এখনও পরিষ্কার নয়, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা এ ধরনের প্রস্তাবে একমত হবেন কিনা। শান্তির শর্ত নিয়ে জেলেনস্কি ও পুতিনের মধ্যে এখনও অনেক দূরত্ব রয়েছে।
হোয়াইট হাউসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা অবশ্য সিবিএসকে বলেছেন, আগামী শুক্রবারের বৈঠকে জেলেনস্কির অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সুযোগ এখনও আছে।

ইউক্রেনে পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসন সত্ত্বেও বড় ধরনের বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে মস্কো। তবে তারা এখন ইউক্রেনের ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। ইউক্রেন সেখানে রাশিয়াকে পিছু হটাতে পারেনি। ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে তিন দফার সরাসরি আলোচনা যুদ্ধের অবসানে সফল হয়নি। মস্কোর সামরিক ও রাজনৈতিক শর্তগুলোকে কিয়েভ ও তার মিত্ররা কার্যত ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচনা করছে।

রাশিয়ার দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে– ইউক্রেনের সোনাবাহিনীর আকার কমিয়ে আনা ও ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে একটি নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়া এবং রাশিয়ার ওপর থাকা পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা।

মস্কো চায় ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যে চারটি অঞ্চল আংশিক রাশিয়া দখল করে আছে, সেখান থেকে কিয়েভ তার সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করুক। তবে ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, একটি ত্রিপক্ষীয় শান্তিচুক্তি করার সুযোগ আছে। তিনি বলেন, ইউরোপীয় নেতারা শান্তি চান, প্রেসিডেন্ট পুতিন, আমার বিশ্বাস শান্তি চান এবং জেলেনস্কি শান্তি চান। জেলেনস্কিকে তাঁর প্রয়োজন অনুযায়ী সব পেতে হবে। কারণ, তাঁকে কিছু স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে এবং আমি মনে করি, সে জন্য তিনি কঠোর পরিশ্রম করছেন।

গত মাসে ট্রাম্প বিবিসির কাছে স্বীকার করেছিলেন, উইটকফের আগের সফরের পর পুতিন তাঁকে হতাশ করেছিলেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় তিনি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছিলেন। তিনি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলে আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়ে রাশিয়াকে শুক্রবার পর্যন্ত একটি সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। শুক্রবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আর কিছু বলেনি যুক্তরাষ্ট্র।

এর আগে ফেব্রুয়ারিতে টেলিফোনে পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ট্রাম্প। রাশিয়ার পূর্ণ আগ্রাসনের পর এটাই ছিল দুজনের মধ্যে সরাসরি প্রথম আলাপ। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পুতিনের শেষ বৈঠক হয়েছিল ২০২১ সালে। তখন জেনেভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছিলেন জো বাইডেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ