সাকিব আল হাসানের ঝলমলে ক্যারিয়ার। অথচ, বিতর্ক তার নিত্যসঙ্গী। সাকিব ও বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। বিতর্ক ছাড়া তিনি চলতেই পারেন না। সবশেষ বেটিং সাইটের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনারনিউজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সেই চুক্তি বাতিলের পর সাকিবকে টি ২০ অধিনায়ক করে পুরস্কার দিয়েছে বিসিবি। সাকিবের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক-
২০১০ : দর্শকের সঙ্গে বাজে আচরণ : ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ব্যাটিং করছিলেন সাকিব। সাইট স্ক্রিনের পাশে এক দর্শকের নড়াচড়ায় রেগে যান। হঠাৎ ক্রিজ ছেড়ে বাউন্ডারি লাইনে ছুটে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি ব্যাট উঁচিয়ে দর্শককে হুমকি দেন।
২০১১ : বিশ্বকাপে বাজে ইঙ্গিত : ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। এরপর সাকিবকে লক্ষ্য করে গ্যালারি থেকে দুয়ো আসতে থাকে। সাকিব যা ভালোভাবে নিতে পারেননি। দর্শকদের উদ্দেশে বাজে ইঙ্গিত করেন।
২০১৩ : দর্শককে মারতে যাওয়া… : বিজয় দিবস টি ২০ ম্যাচ চলাকালে এক দর্শক সাকিবের কাছে অটোগ্রাফ চান। কিন্তু অটোগ্রাফ দিতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এতে কটূক্তি করলে ক্ষুব্ধ হয়ে গ্যালারিতে গিয়ে ওই দর্শকের কলার চেপে ধরেন সাকিব।
২০১৪ : তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ : শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচে ধারাভাষ্যকাররা আলোচনা করার সময় প্যাভিলিয়নে বসে থাকা সাকিব টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েন। ক্যামেরা দেখে অশালীন ভঙ্গি করেন। ফলশ্রুতিতে তিন ম্যাচে নিষিদ্ধ হন।
২০১৪ : দর্শক পেটানো : সেবার ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে চলাকালে স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে এক দর্শককে পিটিয়ে আহত করেন সাকিব। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে আসা এবং দর্শক পেটানো নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও তাতে শাস্তি হয়নি এই বাঁ-হাতি অলরাউন্ডারের।
২০১৫ : এক ম্যাচ নিষিদ্ধ : এবার বিপিএলে সিলেট সুপার স্টার্সের বিপক্ষে ম্যাচে আম্পায়ার তানভীর আহমেদের সঙ্গে অসদাচরণ করেন রংপুর রাইডার্সের সাকিব। আম্পায়ারের সঙ্গে বাজে আচরণের দায়ে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।
২০১৬ : আবার আম্পায়ার বিতর্ক : বিপিএলে সেবার ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব। ফিল্ড আম্পায়ারের দেওয়া একটি সিদ্ধান্ত না মেনে অসদাচরণ করেন। আবারও তাকে শাস্তি পেতে হয়নি।
২০১৭ : দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে না চাওয়া : দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে ছয় মাসের ছুটি চেয়ে বসেন সাকিব। বিসিবিকে তিনি মানসিক অবসাদের কথা জানান। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে সাকিবকে ছুটি দিতে রাজি ছিলেন না। বোর্ড শেষ পর্যন্ত ছুটি দেয় তাকে।
২০১৮ : অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ক্যারিবীয় যাত্রা : বোর্ডের অনাপত্তিপত্র না নিয়েই ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে যাচ্ছিলেন সাকিব, যা মেনে নিতে পারেনি বোর্ড।
২০১৯ : ফটোসেশনে অনুপস্থিত : ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন সাকিব। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে দলীয় ফটোসেশনেই উপস্থিত ছিলেন না তিনি।
২০১৯ : তথ্য গোপন করে এক বছর নিষিদ্ধ : আইসিসির শাস্তি থেকে এবার আর বাঁচতে পারেননি সাকিব। জুয়াড়িরা তাকে ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব দিলেও তিনি সেটা গোপন রাখেন। এ কারণে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে আইসিসি সাকিবকে এক বছর নিষিদ্ধ করে।
২০২১ : শ্রীলংকা সফরে যাননি : সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে নিউজিল্যান্ড সফর থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। এরপর আইপিএলে খেলার জন্য শ্রীলংকা সফরে যেতে অপারগতার কথা জানান। শেষ পর্যন্ত সফরে যাননি তিনি।
২০২১ : জৈব সুরক্ষাবলয় ভাঙা : করোনাকালে জৈব সুরক্ষবলয়ে খেলার তোয়াক্কা করেননি। ঢাকা লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলছিলেন। সেদিন মোহামেডানের অনুশীলন ছিল না। সাকিব তার একাডেমির এক ছেলেকে নিয়ে অনুশীলন শুরু করেন। পরে অবশ্য ক্ষমা চান।
২০২২ : আবারও নাটক! : আবারও শারীরিক ও মানসিক চাপের কথা বলে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে না গিয়ে ছুটি চেয়েছিলেন সাকিব। বিসিবি চাপ দিলে তিনি মানসিকভাবে হঠাৎ চাঙা হয়ে ওঠেন।
২০২২ : এবার বেটিং সাইটের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি : বেটউইনারনিউজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিতর্কের অংশ হলেন। বিসিবির নিয়মের তোয়াক্কা না করে চুক্তি করেন। বিসিবির কড়াকড়িতে শেষ পর্যন্ত সাকিব চুক্তি বাতিল করেছেন।