মাত্র তিন বছর বয়সে ইংল্যান্ডের যুবরাজ হয়েছিলেন তিনি। এরপর কেটে গেছে সাত দশক। সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ইংল্যান্ডের রাজসিংহাসনে আরোহনের জন্য অপেক্ষায় থাকায় পর ৭৩ বছর বয়সী রাজা তৃতীয় চার্লসের অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
বয়স হিসাব করলে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে এই প্রথম। প্রায় বার্ধক্যে পৌঁছে ৭৩ বছর বয়সে ব্রিটেনের রাজা হলেন চার্লস। তবে এখন আর তিনি চার্লস নন, রাজা তৃতীয় চার্লস।
বৃহস্পতিবার ৯৬ বছর বয়সে মারা যান রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মৃত্যুর পর পরই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রিটেনের রাজা হন প্রিন্স চার্লস। তবে রীতি অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে তার নাম ঘোষণা করা হয়।
রাজা হিসেবে চার্লসকে প্রথম সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, কী হবে তার নাম। চার্লস, ফিলিপ, আর্থার ও জর্জ, এই চারটি নামের মধ্যে যে কোনো একটি নাম বেছে নিতে হয় তাকে। পরিবারের বাকিদের ক্ষেত্রেও উপাধির নানা বদল হয়েছে।
চার্লসের স্ত্রী ক্যামিলা হয়েছেন কুইন কনসর্ট। বাবার উপাধি ডিউক অব কর্নওয়াল উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন চার্লসের বড় ছেলে উইলিয়াম। তিনি ও তার স্ত্রী কেট এখন থেকে ডিউক ও ডাচেস অব কর্নওয়াল এবং কেমব্রিজ।
উইলিয়াম ও কেট শিগগিরই প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস উপাধিতে ভূষিত হবেন। অর্থাৎ, তারা হবেন যুবরাজ ও যুবরানি। রাজা তৃতীয় চার্লস স্বয়ং এই খেতাব প্রদান করবেন বড় ছেলেকে।
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের জ্যেষ্ঠ পুত্র চার্লস কখনোই তার মায়ের মতো জনপ্রিয় ছিলেন না। এই বিষয়টি তাকে রাজা হিসেবে চাপে রাখতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
রাজপরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনিই বারবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
১৯৪৮ সালের ১৪ নভেম্বর স্যানড্রিংহ্যাম রয়্যাল এস্টেটে জন্ম হয় চার্লসের। রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ ও প্রিন্স ফিলিপের প্রথম সন্তান তিনি। চার্লসের যখন তিন বছর বয়স, তখন তার দাদা রাজা ষষ্ঠ জর্জ মারা যান।
১৯৫২ সালে সিংহাসনে বসেন দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। আরও তিন ভাইবোন রয়েছে চার্লসের— অ্যান, অ্যান্ড্রু ও এডওয়ার্ড। প্রথম সন্তান হওয়ার সুবাদে তিনিই হন প্রিন্স অব ওয়েলস। ন’বছর বয়সে তাকে সেই খেতাব দেন রানি। প্রথম সন্তান হওয়ায় আরও কিছু উপাধি পেয়েছিলেন চার্লস। যেমন ডিউক অব কর্নওয়াল, ডিউক অব রোদসে, আর্ল অব ক্যারিক, ব্যারন অব রেনফ্রিউ, লর্ড অব দ্য আইলস এবং প্রিন্স ও গ্রেট স্টুয়ার্ড অব স্কটল্যান্ড।
চার্লসকে বড় করার সময়ে রাজপরিবারের বহু প্রথা ভেঙেছিলেন দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। প্রাসাদে শিক্ষক না রেখে তাকে বাইরের স্কুলে পড়তে পাঠানো হয়েছিল। ওয়েস্ট লন্ডনের হিল হাউস স্কুল ও পরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে পড়াশোনা করেন চার্লস। কেমব্রিজে পড়ার সময়ে রয়্যাল এয়ার ফোর্সে পাইলট হওয়ার প্রশিক্ষণও নেন তিনি।
১৯৮১ সালে যুবরাজ চার্লস বিয়ে করেন ডায়ানাকে। যাকে বলা হত ‘সাধারণ মানুষের রাজকুমারী’। তাদের বিয়ের রূপকথায় বুঁদ হয়েছিল বিশ্ব।
ডায়ানার সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের ছটায় কোথাও যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিলেন চার্লসও। কয়েক বছর পরেই জানা যায়, এই রূপকথা সুখের নয়। ১৯৯৬ সালে তাদের বিয়ে ভেঙে যায়।
ব্রিটিশ ট্যাবলয়েডগুলো লিখেছিল, পরকীয়ার জেরেই বিচ্ছেদ। ব্রিটিশ দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডায়ানাও বলেছিলেন, ‘এই বিয়েতে তিন জন মানুষ ছিল… বড্ড ভিড়।’ সেই তৃতীয় মানুষটি রাজা তৃতীয় চার্লসের বর্তমান স্ত্রী, কুইন কনসর্ট ক্যামিলা।
১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসে প্রেমিক দোদি আল-ফায়েদের সঙ্গে একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান ডায়ানা। চার্লসের বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ ছিলই, এবার ষড়যন্ত্রের গন্ধও পান অনেকে।
তার রাজা ‘সাজা’ হল ঠিকই, কিন্তু ডায়ানার মৃত্যুর ২৫ বছর পরেও সেই বিতর্কের কালি মুছতে পারেননি চার্লস।