অধিকৃত পশ্চিম তীরে আরও বসতি স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ইসরায়েলের পার্লামেন্ট নেসেটে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে। এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিন। পাশাপাশি প্রস্তাবটির বিষয়ে সতর্ক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, অধিকৃত পশ্চিম তীর দখলে নেসেটের পদক্ষেপ গাজা সংঘাত অবসানে ওয়াশিংটনের পরিকল্পনাকে হুমকিতে ফেলবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকারের কট্টরপন্থি আইনপ্রণেতারা অধিকৃত পশ্চিম তীরের আরও বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করতে গত বুধবার পার্লামেন্টে প্রস্তাবটির প্রাথমিক অনুমোদন দেন। বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিলটি ২৫-২৪ ভোটে পাস হয়। ১২০ আসনের নেসেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য এটি যথেষ্ট কিনা– তা স্পষ্ট নয়। তবে নেতানিয়াহু চাইলে এ প্রস্তাবকে বিলম্বিত বা বাতিল করতে পারবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হওয়ার ১০ দিন পর এবং একঝাঁক মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তার ইসরায়েল সফরের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটল। গত বুধবার রুবিও বলেন, এসব পদক্ষেপ ‘শান্তি চুক্তি’র জন্য সম্ভাব্য হুমকিস্বরূপ। এ সময়ে এমন কিছু উল্টো ফল নিয়ে আসতে পারে। যদিও বিলটি আইনে পরিণত হতে এখনও বেশ কয়েক দফা অনুমোদনের প্রয়োজন।
রুবিও অধিকৃত এলাকায় সার্বভৌমত্ব সম্প্রসারণের জন্য ইসরায়েলের আইনপ্রণেতাদের প্রাথমিক ভোট ও সেখানকার মূল বাসিন্দা ফিলিস্তিনিদের ওপর বসতি স্থাপনকারীদের হামলা বৃদ্ধিকে ‘শান্তির জন্য হুমকি’ বলে বর্ণনা করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, ইসরায়েলের পার্লামেন্টে তোলা ওই বিল ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জমি দখলের সমতুল্য।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সেপ্টেম্বরে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ইসরায়েলকে পশ্চিম তীর সংযুক্ত করতে দেব না। এটি ঘটবে না।’ ট্রাম্পের কথা স্মরণ করিয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট করে দিয়েছেন– এটি এমন কিছু নয়, যা আমরা এখনই সমর্থন করতে পারি।’
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ভোট চলাকালে নেসেটে হইচই শুরু হয়। কট্টরপন্থি নোয়াম দলের সদস্য আভি মাওজ ঘোষণা করেন– ‘সার্বভৌমত্ব প্রয়োগের সময় এসেছে।’ তাঁর দাবি, ফিলিস্তিনের ভূমিতে বসতি স্থাপনের অধিকার ইসরায়েলের রয়েছে।
ফিলিস্তিনের নিন্দা: ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নেসেটের পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ফিলিস্তিনের ভূমির ওপর ইসরায়েলের কোনো সার্বভৌমত্ব থাকবে না। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখলের সময় ইসরায়েল প্রায় ১৬০টি বসতি নির্মাণ করেছে, যেখানে সাত লাখ ইহুদির বাস। তারা আনুমানিক ৩৩ লাখ ফিলিস্তিনির সঙ্গে জোরপূর্বক থাকেন।
১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৭ সালে একটি মানচিত্র নির্ধারণ করে দেয় জাতিসংঘ। সে অনুযায়ী, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেমসহ সুনির্দিষ্ট এলাকা ফিলিস্তিনিদের দেওয়া হয়। কিন্তু ক্রমেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন ও ওইসব এলাকা দখল করতে শুরু করে। ইসরায়েল যেসব ইহুদিকে বসতি বানিয়ে দেয়, তারা প্রতিবেশী ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সহিংস আচরণ করে। প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা করে; তাদের ফসল নষ্ট ও গবাদি পশু মেরে ফেলে।
যা বলছেন বিশ্লেষকরা: বিশ্লেষকরা বলছেন, নেসেটে বিল পাস হওয়া ছাড়াই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের বিস্তীর্ণ ভূমি নিয়ন্ত্রণ করছে। অধিকৃত পশ্চিম তীরে তারা পূর্ণ সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। ফিলিস্তিন ফোরাম ফর ইসরায়েলি স্টাডিজের গবেষক ওয়ালিদ হাব্বাস বলেন, অধিগ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা খুব বড় ব্যবধান তৈরি করবে না। তবে এর রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, সবাই জানি– দ্বিরাষ্ট্র সমাধান ইতোমধ্যেই মৃত, যদিও আন্তর্জাতিক আলাপ-আলোচনায় এ নিয়ে এখনও কথা হয়। কিন্তু অধিগ্রহণ সম্পন্ন হলে আলোচনার জায়গাটাও থাকবে না।