পদ্মার ঢেউয়ে সাজবে সব সরকারি অফিস

পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে উৎসবের সাজে সাজবে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়। একইসঙ্গে ৮ বিভাগীয় শহর ও ৬৪ জেলার সব সরকারি অফিস প্রাঙ্গণে আলোকসজ্জার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে বিভাগীয় শহর ও সেতুকেন্দ্রিক চারটি জেলা-ঢাকা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে থাকবে ঝমকালো আয়োজন। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় অর্থাৎ সেতুর দুই প্রান্তেই হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অন্যদিকে জনসভা হবে মাদারীপুরের শিবচরে। সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। আমাদের বিভাগের পক্ষে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব কাজ ভালোভাবেই চলছে।

দেশের সব সরকারি অফিসে আলোকসজ্জার পাশাপাশি পদ্মা সেতুর তথ্য সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন, স্টিকার দিয়ে সাজানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সব জেলার ডিসিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক দফা বৈঠক করেছেন। সেতু উদ্বোধনের আগে আরেক দফা বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জেলার সব সরকারি দপ্তর-সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ করতেও নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সচিবালয়ে সাজসজ্জার বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী সব ভবনের পদ্মা সেতুসংক্রান্ত স্লোগান সংবলিত বিশাল আকারের ড্রপডাউন ব্যানার টাঙানো হবে।

এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সঙ্গে সেতুর ছবি থাকবে। এছাড়া সচিবালয়ের সব লিফটের সামনে পদ্মা সেতুসংক্রান্ত তথ্য ও স্লোগানের স্টিকার থাকবে। ব্যানার-ফেস্টুনে ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ, শেখ হাসিনার অবদান’, ‘পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, শেখ হাসিনার স্বপ্নপূরণ’ ‘আর দাবায়ে রাখতে পারবা না’ শীর্ষক স্লোগান স্থান পাবে।

জেলায় জেলায় প্রস্তুতি : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সব জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এনেছে যশোর জেলা প্রশাসন। যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চাইলে যুগান্তরকে বলেন, উদ্বোধনের দিন সকালে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সঙ্গে তাল রেখে বেলুন ও পায়রা উড়ানো হবে। বড় ডিসপ্লেতে উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানো হবে। এছাড়া ঢাকা থেকে পাঠানো থিম সংসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো ডিসপ্লেতে দেখবেন উপস্থিতরা।

তিনি বলেন, বিকালের দিকে জমজমাট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ আছে। সেখানে ঢাকা থেকে আমন্ত্রিত শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করবেন। শহরব্যাপী একটি উৎসবের ছাপ থাকবে, এমন উদ্যোগ নিচ্ছি আমরা।

লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক আনোয়ার হোছাইন আকন্দ যুগান্তরকে বলেন, স্থানীয় স্টেডিয়ামে এলইডি মনিটরের মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠান দেখানো হবে। আশা করছি পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষের সমাগম হবে। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মুক্তিযোদ্ধা, স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। আশা করি ভালো অনুষ্ঠান হবে।

তবে বিভাগীয় শহর ও সেতুকেন্দ্রিক চারটি জেলা-ঢাকা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আরও বেশি ঝমকালো আয়োজন থাকবে। এসব জায়গায় ৫ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাতিরঝিলে বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানোর পাশাপাশি লেজার শোর আয়োজন হচ্ছে। রাতে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সেতুর আশপাশের প্রস্তুতি : পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ২৪ জুন সকাল থেকে ২৬ জুন সকাল পর্যন্ত সেতুসংলগ্ন মহাসড়কে কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক চলতে দেওয়া হবে না। উদ্বোধনের দিন সংশ্লিষ্টদের চলাচল নির্বিঘ্ন করতে ধলেশ্বরী, চীন-মৈত্রী ও আড়িয়ালখাঁ সেতুর টোল আদায় বন্ধ থাকবে। পোস্তগোলা ব্রিজে যানজন এড়াতে বসানো হবে ডিভাইডার।

এছাড়া সেতুসংলগ্ন সড়কগুলোর প্রয়োজনীয় মেরামত দ্রুত সারতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানকেন্দ্রিক কার্যক্রমের চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি সরবরাহ করতে বিআরটিসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশপাশের জেলাগুলো থেকে যেসব সড়ক পদ্মা সেতুর দিকে এসেছে তার সবগুলোতে থাকবে বিলবোর্ড ও ডিজিটাল ব্যানার।

সূত্র জানায়, উদ্বোধনের দিন পদ্মা সেতুর জাজিরা অংশে অনেক বেশি গাড়ির চাপ থাকবে। বিষয়টিকে আমলে নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে যানজট এবং দুর্ঘটনার মতো কিছু না হয়। এছাড়া ভাঙা ইন্টারসেকশন, এক্সপ্রেসওয়ে, ফরিদপুর, ভাঙা, বরিশাল, কুয়াকাটা, কালনা, নড়াইল, যশোর সড়ককে ভালোভাবে প্রস্তুত করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব রাস্তার কেথায়ও গাছপালা অপসারণ করতে হলে সেটা দ্রুত করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে যেখানে সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য তাৎক্ষণিক উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সেটাও নিশ্চিত করা হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ