সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ছিল হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইডের অন্তত ১৮টি কনটেইনার। এসব পণ্য রপ্তানির উদ্দেশ্যে সেখানে রাখা হয়েছিল। এই রাসায়নিক রাখা কনটেইনার বিস্ফোরণের পরই আগুন সারা ডিপোতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। রোববার দিনভরও একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়।
ফায়ার সার্ভিসসহ অগ্নিনির্বাপণ সংশ্লিষ্টদের ধারণা, বেসরকারি এই ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে রক্ষিত হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড বোঝাই কনটেইনারেই আগুন ধরে। ভয়াবহ ও বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর তা পুরো ডিপোতে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর কনটেইনারগুলো একে একে বিস্ফোরিত হতে থাকে। রোববার দিনভরও একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। রাসায়নিক পদার্থ না থাকলে হয়তো এত বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো’স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, রাসায়নিক পদার্থগুলো কম্বোডিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল। তবে কম্বোডিয়া এই চালানের শেষ গন্তব্য, নাকি সেখান থেকে অন্য বন্দরে নিয়ে যাওয়া হতো তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। রাসায়নিকের রপ্তানিকারকের বিষয়েও এখনো নিশ্চিত তথ্য মেলেনি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও অগ্নিনির্বাপণ কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার সূত্রে জানা যায়, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ডিপোটিতে যায়। এরপর রাত প্রায় ১০টার দিকে আগুন নেভানোর সময় ভয়াবহ শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে কেঁপে ওঠে আশপাশের প্রায় চার বর্গকিলোমিটার এলাকা। অনেক বাসা-বাড়ির জানালার কাঁচ ভেঙে পড়েছে। ভূমিকম্প হচ্ছে মনে করে এ সময় অনেকে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন।
ওই বিস্ফোরণে ডিপোতে রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়লে আগুনের ভয়াবহতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। বিস্ফোরণ ও আগুনে ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশ সদস্য, পণ্য লোডিং-আনলোডিংয়ে নিয়োজিত ডিপো শ্রমিক, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক এবং আগুন নেভাতে সহযোগিতা করতে আসা স্থানীয় লোকজন হতাহত হন। তাদের কারো শরীর পুড়ে গেছে, কারো নাড়িভূড়ি বেরিয়ে গেছে, কারো হাত-পা উড়ে গেছে।
সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে মালিক পক্ষের কাউকে পাচ্ছি না। তাদের পেলে জানতে পারতাম, কোন কনটেইনারে কী আছে। যেহেতু কেমিক্যাল, তাই জানা দরকার তা কোন ধরনের। একেক কেমিক্যালের নেচার একেক ধরনের। আমি বুঝতে পারছি না, এটা কোন ধরনের কেমিক্যাল। কিভাবে নির্বাপণ করব। যার জন্য আগুন নেভাতে সময় লাগছে। বেগ পেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পরই বিস্ফোরণ হচ্ছে। বিস্ফোরণের জন্য কাছেই যেতে পারছি না। আমরা ফায়ার সার্ভিস থেকে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করেছি। তদন্ত শেষে জানা যাবে কিভাবে আগুন লেগেছিল।