‘জীবন ম্যাচ’ জিততে লড়ছেন রুবেল

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে মোশাররফ হোসেন রুবেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা দেখে মনে হতে পারে, ‘জীবন কতো সুন্দর।’ ঠিক পাশের হুইলচেয়ারে বসা রুবেলের ছবিটা দেখে জন্মাতে পারে ক্ষোভ, ‘জীবন এতো নিষ্ঠুর কেন?’

সত্যিই জীবন সুন্দর, নাকি সংগ্রামের মঞ্চ? নাকি জীবনের আরও কোনো বিশেষণ আছে, সংজ্ঞা আছে?

এইতো সেদিনও তার সতীর্থরা যে ঘাস মাড়িয়ে রানের ফুলঝুরি ছুটিয়েছেন, বল হাতে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করেছেন সেই মাঠেই এক সময় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মোশাররফ রুবেলও। ২২ গজে বল হাতে ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষকে নাড়িয়ে দিতেন। কখনো ব্যাট হাতে দেয়াল হয়ে রুখে দাঁড়াতেন। অথচ সময়ের কি আজব খেলা! জীবনের কি কঠিন পরীক্ষা! সেই মোশাররফ হোসেন রুবেল ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিট, প্রতিটি সেকেন্ড এখন জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। আইসিইউতে পড়ে রয়েছেন নিষাড় হয়ে। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষনে কাটছে দুঃসহ সময়।

 

রুবেলের নিয়মিত খোঁজ রাখছেন বাল্যবন্ধু নিয়াজ মোর্শেদ। নিয়মিত ফেসবুকে তার শারীরিক অবস্থার আপডেট দেন।  ঠিক তেমনই একটি ছবি পোস্ট করেছেন গত রোববার (১৩ মার্চ)।

হুইলচেয়ারে বসা রুবেলের ছবিটা দেখে হতভম্ভ সবাই। অপলক দৃষ্টিতে রুবেলের নিষ্পাপ চাহনি, মায়াবি হাসি, সারল্য অবয়ব যেন চোখ ভিজিয়ে দেয়। দুদিন ধরে ফেসবুকের দেয়ালে ছবিটা ঘুরছে। যাদেরই নজরে আসছে তারাই আফসোসের সাগরে ডুবে যাচ্ছেন।

 

২০১৯ সালের মার্চে ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে রুবেলের। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ নিউরো সার্জন এলভিন হংয়ের তত্ত্বাবধানে সফল অস্ত্রোপচার হয় তার। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়েমিত সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বরে সবশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।

২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হলে ভেঙে পড়েন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরোনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয়েছে কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছেন।

সবশেষ আপডেট, সোমবার রাতে তাকে স্কয়ার হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। শ্যালক জানিয়েছেন, প্রয়োজনে লাইফ সাপোর্টও দেওয়া হতে পারে।

 

স্বামীর সবশেষ খবর জানাতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে গেলেন চৈতী ফারহানা রূপা,‘ট্রিটমেন্টতো হচ্ছে। বিদেশে চিকিৎস শেষে বাংলাদেশে এলাম, এখন শরীরটা ড্রপ করেছে। বেশি খারাপ পরিস্থিতি এখন। হাঁটা চলা করে না, আনকনসাস, কথা বললে রেসপন্স করে না। ভারতে গিয়েছিলাম, নতুন একটা কেমো সাজেস্ট করেছে।’

‘ব্রেন ক্যান্সারতো আসলে ভিন্ন একটা ক্যান্সার। শরীরের অন্য কোথাও হলে কেটে ফেলা যায়, কিন্তু ব্রেনতো আর কাটা যায় না। এটা আমাদের শরীর কন্ট্রোল করে, এ জন্য এটা আরও ডিফিকাল্ট। মাঝে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন হয়েছে এজন্য শরীর অনেক দুর্বল। একটা বড় সার্জারি হলো। এগুলার কারণে ব্রেন দুর্বল হয়ে গেছে, কাজ করছে না। ব্লাডে একটু সমস্যা দেখা গেছে, সোডিয়াম লেবেলটা বেড়ে গেছে। এ জন্যই তাকে হসপিটালাইজড করা। অজ্ঞান না, কিন্তু রিঅ্যাক্ট করতে পারছে না, বুঝতে পারছে না, সাড়া দিতে পারছে না।’

 

ঘড়ির কাঁটা চলছে। প্রতিটি মুহূর্তেই জীবন থেকে একটি একটি করে সেকেন্ড হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মুহূর্তকে রাঙিয়ে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই সংগ্রাম। সেই সংগ্রামের গল্প মানুষ আর মনভেদে নানারকম। রুবেলের সংগ্রাম অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তবুও তিনি হাল ছাড়েন না। হুইলচেয়ারে বসে একটি রাঙা ভোরের স্বপ্ন দেখেন। যেই ভোরে আলোকিত হবে তার পৃথিবী, তার ছোট্ট সুখের সংসার, তার সেই সবুজ মাঠ, এক জোড়া কেডস আর পছন্দের জার্সি গায়ে ২২ গজের পারফরম্যান্স।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ