বিশ্বের অন্যতম শিল্প ও পর্যটন নির্ভর দেশ ইতালি তাদের শ্রমবাজারের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে এক বিশাল পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে মোট প্রায় ৫ লক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে দেশটির সরকার। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ ৩৮ দেশ থেকে কর্মী আনা ও নিয়োগের অনুমোদনের জন্য আবেদনপত্র প্রি-ফাইলিং প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে চলতি মাসের ২৩ অক্টোবর থেকে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগকর্তা, নিয়োগকর্তাদের সংস্থা এবং পেশাদারদের জন্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দেশটির আন্তঃমন্ত্রিপরিষদ।
জারি করা আন্তঃমন্ত্রিপরিষদ সার্কুলার অনুযায়ী, আগামী ২৩ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৭ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত আগ্রহী নিয়োগকর্তা, নিয়োগকর্তাদের সংগঠন এবং যোগ্য পেশাদাররা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ভিসেস পোর্টালে আবেদনপত্রগুলি আগে থেকে পূরণ করে রাখতে পারবেন। পোর্টালটিতে প্রবেশ করতে হলে আবেদনকারীকে অবশ্যই এসপিআইডি (SPID) অথবা সিআইই (CIE) ডিজিটাল পরিচয়পত্র ব্যবহার করতে হবে।
এছাড়া, আবেদনটি সম্পূর্ণ করার জন্য আইনি সত্তাগুলির জন্য আইএনআই-পিইসি (INI-PEC) ডাটাবেসে অথবা অন্যান্যদের জন্য আইএনএডি (INAD) ডাটাবেসে নথিভুক্ত একটি প্রত্যয়িত ইমেল ঠিকানা (PEC) থাকা বাধ্যতামূলক। প্রি-ফাইলিং প্রক্রিয়ার সময় প্রয়োজনীয় সংযুক্ত নথিগুলিও সিস্টেমে আপলোড করা যাবে। তবে আবাসন ব্যবস্থা এবং প্রশংসাপত্র সম্পর্কিত নথিগুলি ডিজিটালি স্বাক্ষরিত হতে হবে বলে সার্কুলারে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনের জন্য বিভিন্ন খাতের জন্য নিম্নলিখিত মডেলগুলি ব্যবহার করতে হবে:
সি-এগ্রিকালচার স্টেজ: কৃষি খাতের মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য।
সি- স্টেজ টুরিজম: পর্যটন খাতের মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য।
বি টুয়েন্টি টুয়েন্টি (B2020): প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নির্ধারিত ক্ষেত্রগুলির জন্য নন-মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য।
কোটায় এ-বিস (A-bis): পারিবারিক (ফ্যামিলি কেয়ার) খাতের নন-মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য।
প্রি-ফাইলিং প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর পোর্টালটি ৯ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পুনরায় খোলা হবে। এই সময়ে নতুন আবেদন পূরণ করা যাবে না। কেবল আগে থেকে পূরণ করা আবেদনগুলি সম্পাদনা এবং সংরক্ষণ করা যাবে।
যে সকল প্রি-ফাইল আবেদনগুলির স্ট্যাটাস “পাঠানোর জন্য প্রস্তুত” (to be sent) থাকবে, সেগুলিকে নির্দিষ্ট ‘ক্লিক ডে’ অনুযায়ী জমা দেওয়া যাবে:
১২ জানুয়ারি, ২০২৬: কৃষি খাতের মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য এন্ট্রি (কৃষি C-stag ফর্ম)।
৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬: পর্যটন খাতের মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য এন্ট্রি (পর্যটন C-stag ফর্ম)।
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬: নন-মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য এন্ট্রি (B2020 ফর্ম)।
১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৬: পারিবারিক পরিচর্যা খাতের নন-মৌসুমী অধীনস্থ কাজের জন্য এন্ট্রি (A-bis ফর্ম)।
তালিকায় ৩৮টি দেশের মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, জাপান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, কোরিয়া, আইভরি কোস্ট, ইকুয়েডর, মিশর, এল সালভাদর, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, জর্জিয়া, ঘানা, জর্ডান, গুয়াতেমালা, কিরগিজস্তান, কসোভো, মালি, মরক্কো, মরিষাস, মলদোভা, মন্টিনিগ্রো, নাইজার, নাইজেরিয়া, পেরু, উত্তর মেসিডোনিয়া প্রজাতন্ত্র, সেনেগাল, সার্বিয়া, সুদান, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন ও উজবেকিস্তান।
ইতালির সরকার কর্তৃক ঘোষিত ২০২৬-২০২৮ সালের এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিক নিয়োগ কার্যক্রমে বাংলাদেশিদের জন্য আবেদনের সুযোগ থাকছে বলে সরকারি তথ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে। পূর্ববর্তী নিয়োগগুলোর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ধারণা করা হচ্ছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি এবারও চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হতে পারেন। এই ঘোষণার পর প্রবাসী বাংলাদেশি এবং ইতালির কর্মপ্রত্যাশী সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
তবে, অভিবাসন-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা এই নিয়োগ কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। বিগত বছরগুলোতে ‘স্পন্সর ভিসা’ প্রক্রিয়ায় অনেক বাংলাদেশি আবেদনকারী জাল কাগজপত্র বা অসাধু এজেন্সির খপ্পরে পড়ে দুর্ব্যবহার ও জটিলতার সম্মুখীন হয়েছেন। তাই আবেদনকারীদের সকল প্রকার প্রতারণা এড়িয়ে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সঠিক প্রক্রিয়ায় পদক্ষেপ নিতে হবে জানান তারা।