ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, সাড়ে তিন লাখ টাকায় সমঝোতা!

নড়াইলের কালিয়ায় ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন শিউলী বেগম (২৫) নামে এক প্রসূতি।

শুক্রবার উপজেলার নড়াগাতি থানার বড়দিয়া বাজারে অনুমোদনহীন হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে সাড়ে তিন লাখ টাকায় নিহতের পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করার পর ময়নাতদন্ত ছাড়াই রাতে লাশ দাফন করা হয়েছে।

ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত চিকিৎসক শরিফুল ইসলাম ও মালিকপক্ষের লোকজন পলাতক রয়েছেন।

নিহত শিউলী বেগমের বাবার বাড়ি খাশিয়াল ইউনিয়নের পেচী ডুমুরিয়া গ্রামে। তার শ্বশুরবাড়ি পার্শ্ববর্তী গোপালগঞ্জ সদর থানার বড়ফা গ্রামে ।

এদিকে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার দুপুরে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

নিহতের পরিবার জানায়, সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের জন্য শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিউলী বেগমকে।

অস্ত্রোপচারের আগে সার্জন শরিফুল ইসলাম প্রসূতিকে অচেতন করার জন্য একটি ইনজেকশন পুশ করেন। কিছুক্ষণ পর শিউলী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

মৃত্যুর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তড়িঘড়ি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ‘রোগীর প্রেসার কমে গেছে’- এমন অজুহাতে রোগীকে খুলনা মেডিকেলে স্থানান্তরের নাটক সাজায়।

বিষয়টি স্বজনরা বুঝতে পেরে রোগীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে বাধা দেন। এরপর উৎসুক জনতা ভিড় করলে রোগী মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ পায়।

পরে হাসপাতালের প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পেছনের দরজা দিয়ে চিকিৎসক ও হাসপাতালের লোকজন দ্রুত সটকে পড়েন।

এ ঘটনার পর নিহত প্রসূতির পরিবারের লোকজন বিচারের দাবিতে লাশ নিয়ে হাসপাতালের সামনে অবস্থান নেন।

এদিকে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনাটি মীমাংসা করতে এদিন বিকালে বড়দিয়া বাজারসংলগ্ন মুন্সি মানিক মিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে সালিশি বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিতি ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতেই নিহতের পরিবারকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়ে বিষয়টি নিষ্পত্তি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নিহতের স্বামী জিন্নাত শেখ বলেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলায় লড়তে গেলে আমারও দৌড়াতে হবে, অর্থ খরচ করতে হবে। কিন্তু আমি একজন সামান্য ইজিবাইক চালক। সেই চিন্তা করে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ও ৫০ হাজার টাকা মিলাদ বাবদ গ্রহণ করেছি। এটা আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও মেনে নিয়েছেন।

নিহতের বাবা আকবর মোল্যা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। মামলা চালানোর সামর্থ্য নেই। আমার নাতনির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সাড়ে তিন লাখ টাকায় হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে।

নড়াগাতি থানার ওসি শুকান্ত কুমার সাহা জানান, পুলিশের উপস্থিতিতে গ্রাম্যসালিশ বৈঠকে ঘটনাটি মীমাংসা করার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। তারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

তিনি বলেন, প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় এখনো পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপক অনুপ দাস বলেন, বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে। তবে এর বাইরে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালের মালিক খান শাহীন সাজ্জাদ ওরফে পলাশের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হয়; কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কল কেটে মোবাইল বন্ধ করে রাখেন।

নড়াইল সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কালিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজল মল্লিককে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী চার কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাজি খান রওশন আলী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও অনুমোদন দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ