গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন। শ্রমিক সংকটের কারণে পাঁচ বিঘা জমির বোরো ধান পেকে প্রায় পচন ধরেছে। অনেক খুঁজে শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি বেশি। প্রায় দেড় মণ ধানের দাম এক শ্রমিকের দিন খরচ!ফলে থমকে আছে ঘরে ধান উঠানোর কাজ।
শনিবার (৭ মে) সকালের দিকে শ্রীপুরের শ্রমিক হাটে প্রতি বিঘা জমির দান কাটা বাবদ ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকানোর অভিযোগ করছেন কৃষকরা। সেখানে দিনচুক্তি একজন শ্রমিকের মজুরি চাওয়া হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শ’ টাকা।
জমিতে ধান পরিপক্ক হয়ে গেলেও শ্রমিকের সংকটের সাথে মজুরি বেশি। কারণ হিসেবে জানা যায়, ধানকাটা এবং লাগানোর কাজ হয় শুধু মৌসুম এলেই। কিন্তু বর্তমানে জীবনযাত্রার মানের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শ্রমিকেরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ অটোচালক হয়েছেন, কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ বা মাসিক চুক্তিতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই মৌসুম আসলে এমন সংকটে পড়তে হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর শ্রীপুর উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর, যা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এখনো পর্যন্ত পাকা ধানের ২৫ শতাংশ কাটা হয়েছে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন মেট্রিক টন করে ফলন হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই ডিজেল ও বিদ্যুৎের দাম বাড়ায় সেচ কাজে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সব প্রকার সার কীটনাশকের দামও বেড়েছে কয়েক দফায়। এমন পরিস্থিতিতে ধান চাষে খরচ হচ্ছে আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এরই মধ্যে ধানে ব্লাস্ট রোগের ফলে উৎপাদনও কমে গেছে।
তারা আরও বলেন, বর্তমানে ধানের মণ ৭৫০-৮২০ টাকা। যা একজন কৃষি শ্রমিকের একদিনের মজুরির কম! এক বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ১৪ মণ ধান কাটতে প্রয়োজন ৮ জন শ্রমিক। তার পরেও যদি শ্রমিক পাওয়া যেত, তাহলেও স্বস্তি পাওয়া যেত।
পৌর এলাকার লোহাগাছ গ্রামের বর্গাচাষী জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এবার সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তার প্রায় সব জমির ধানই পাকা শেষ। হাঁটে কয়েকবার গিয়েও তিনি পাচ্ছেন না শ্রমিক।
উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের বিন্দুবাড়ি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েক দিন আগেও ৬০০ টাকায় শ্রমিক মিললেও এখন আর ওই মজুরিতে তারা কাজ করতে চাচ্ছেন না। প্রায় সব কৃষকের ধান কাটার কাজ শুরু হয়ে যাওয়ায় জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি দাঁড়িয়েছে খাবারসহ ১২০০ টাকা।
শ্রমিকরা বলছেন, এক লিটার তেল কিনতে ২০০ টাকা লাগে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। তাই দৈনিক মজুরি ১ হাজার না হলে আমাদের কাজ করেও লাভ নেই।
এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ জাহান খান বলেন, এ উপজেলায় শিল্পায়নের প্রসারে শ্রমজীবী মানুষ দিনকে দিন কলকারখানায় নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়াও, উত্তারাঞ্চলের ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনগুলোও এখন হাওর এলাকায় থাকায় সেখানে শ্রমিকরা বেশি ব্যস্ত। এজন্যই সাময়িক ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।