১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল। ৩১ বছর আগের এই ভয়াবহ দিনটির কথা যেন কিছুতেই ভুলতে পারে না চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। স্বজনহারার স্মৃতি বুকে নিয়ে তারা পার করেছেন ৩১ বছর। ঘূর্ণিঝড়ে এক রাতেই মারা যান ৩০ হাজার মানুষ। অনেকে হারিয়েছেন পরিবারের সবাইকেই।
তাদেরই একজন আবদুল হালিম। ১৯৯১ সালের ভয়াল সেই ২৯ এপ্রিলে তিনি হারিয়েছেন পিতা-মাতাসহ পরিবারের ১১ জন। তিনি জানান, ৯১ ঘূর্ণিঝড়ে আমার পরিবারের ১১ সদস্যকে আমি হারিয়েছি। আমার পরিবারে আমি ছাড়া আর কেউ বেঁচে নাই। তাই প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল আসলে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি।
ভয়াল ২৯ এপ্রিলের ৩১ বছর পার হলেও স্বজনহারার স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল মধ্যরাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের উপর বয়ে যায় প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়। এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারায় উপকূল এলাকার ৩০ হাজার মানুষ। প্রাণহানি ঘটে অসংখ্য গবাদিপশুর।
তাই প্রতি বছর ২৯ এপ্রিল আসলে উপকূলীয় এলাকার মানুষের মাঝে সেই স্বজনহারা স্মৃতিগুলো ভেসে ওঠে। সেই ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধটি। ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ও মানুষের জানমাল রক্ষায় প্রতিবছর বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধের চলমান কাজের ছনুয়া প্রকল্পের অংশের কাজ দীর্ঘদিন বেড়িবাঁধের কাজ শেষ করতে না পারায়, প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক চুক্তি বাতিল করে দরপত্র আহবান করে। এর মধ্যে নতুন কার্যাদেশকৃত কাজটির অগ্রগতি হয়েছে ৬০%। আগামী জুনের মধ্যে সমাপ্ত হতে পারে এই কাজ।
এছাড়াও নদীর মরফোলজিক্যাল পরিবর্তনসহ কাজ বাস্তবায়নকালীন সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছ্বাসের ঢেউয়ের আঘাতে প্রেমাসিয়া অংশের ক্ষতিগ্রস্ত কাজ মেরামত করা হচ্ছে। প্রকল্পের মোট ভৌত অগ্রগতি ৯৩.৫০%।
গণ্ডমারা ইউপি চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী বলেন, ৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল গণ্ডামারা, ছনুয়া, বাহারছাড়া, খানখানাবাদে। তাই ২৯ এপ্রিল আসলে উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ২৯ এপ্রিল ঘূর্ণিঝড়ে বাঁশখালী উপকূলীয় বেড়িবাঁধ লণ্ডভণ্ড হয়েছিল। কিন্তু বিগত সরকারগুলোর আমলে উপকূলীয় বেড়িবাঁধের কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সালে স্থায়ী ও টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী প্রকাশন চাকমা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমান সরকারের আমলে বেড়িবাঁধ ভাঙন রোধে ব্যাপক কাজ করা হয়েছে।