রান পাহাড়ে চাপা পড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ বাংলাদেশের

কোনও সুখবর নেই। প্রথমে রান পাহাড়ে চাপা পড়লো, পরে ব্যাটিংয়ে নেমে ব্যর্থতার চৌকাঠে আটকালো বাংলাদেশ! ফলে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা একেবারেই ভালো গেলো না মুমিনুল হকদের। দক্ষিণ আফ্রিকা বড় সংগ্রহ গড়ায় ব্যাটিংয়ে অন্তত ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটাররা উইকেট বিলিয়ে দিয়ে সেটার ছিটেফোঁটাও মেটাতে পারেননি।

আজ (শনিবার) পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং দিয়ে। আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৭৮ রান নিয়ে দিন শুরু করে প্রোটিয়ারা অলআউট হওয়ার আগে স্কোরে জমা করে ৪৫৩ রান। এরপর প্রথম ইনিংস শুরু করে দ্বিতীয় দিনশেষে মোটেও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। দিন শেষ করেছে ৪১ ওভারে ৫ উইকেটে ১৩৯ রানে। ফলে ৩১৪ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিন শুরু করবেন দুই অপরাজিত ব্যাটার মুশফিকুর রহিম (৩০*) ও ইয়াসির আলী (৮*)।

ব্যাটিংয়ে নেমেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। শুরুতেই হারায় মাহমুদুল হাসান জয়ের উইকেট। আগের টেস্টে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। আনন্দের ভেলায় ভাসতে থাকা জয় পরের টেস্টেই দেখলেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। রান পাহাড়ে চাপা পড়া বাংলাদেশকে ভালো শুরু এনে দেবেন কী, টিকলেন মাত্র ২ বল! রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নিয়েছেন তরুণ ওপেনার।

ডারবানে চাপের মুখে দেখার মতো এক ইনিংস খেলেছিলেন জয়। অভিজ্ঞ ব্যাটাররা যেখানে মুখ থুবড়ে পড়েছিলেন, সেখানে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে খেলেন ১৩৭ রানের ঝলমলে ইনিংস। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে কিছুই করতে পারলেন না। তামিম ইকবালের সঙ্গে ইনিংস শুরু করে মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ধরা পড়েন। ডুয়ান অলিভিয়েরের বাইরের বল অহেতুক খোঁচা দিয়ে উইকেট বিলিয়ে আসেন তিনি।

মাত্র ৩ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে চাপ তৈরি হলেও তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে দারুণ ব্যাটিংয়ে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান দলকে। ব্যক্তিগত রানের সঙ্গে দলীয় সংগ্রহও বাড়ছিল তাতে। শুরু থেকে আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকা তামিম যাচ্ছিলেন হাফসেঞ্চুরির দিকে। কিন্তু একটুর জন্য হয়নি।

লম্বা বিরতি দিয়ে টেস্টে ফিরেছেন তামিম। চোট ও ব্যক্তিগত সমস্যায় ৬ টেস্ট খেলতে পারেননি। ২০২১ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন। এরপর দেশের বাইরে জিম্বাবুয়ে, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার টেস্ট এবং ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্ট মিস করেছেন। পোর্ট এলিজাবেথে ফিরে উইয়ান মুল্ডারের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে ৫৭ বলে করেন ৪৭ রান, যাতে ছিল ৮ বাউন্ডারির মার।

তাতে শান্তর সঙ্গে ভাঙে তামিমের ৭৯ রানের জুটি। সঙ্গীকে হারিয়ে টিকতে পারেননি শান্তও। তামিমকে ফেরানো মুল্ডারের বলেই আউট হয়েছেন তিনি। পরের ওভারেই প্রোটিয়া পেসার এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন বাঁহাতি ব্যাটারকে। আউট হওয়ার আগে শান্ত ৭৪ বলে ৬ বাউন্ডারিতে করেন ৩৩ রান।

জোড়া ধাক্কায় এলোমেলো দলের হাল ধরতে ক্রিজে আসেন মুমিনুল হক। কিন্তু ব্যর্থতার বৃত্তে ঘুরপাক খাওয়া এই ব্যাটার আরও চাপ বাড়িয়ে গেছেন। আবারও ব্যর্থ তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুর্দশা চলছেই! ডারবান টেস্টে হতাশ করা বাংলাদেশ অধিনায়ক দ্বিতীয় টেস্টে আউট হয়েছেন মাত্র ৬ রানে।

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে তৃতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমেছিলেন মুমিনুল। আগের টেস্টের দুই ইনিংসে ০ ও ২ রান করা বাঁহাতি ব্যাটার এবার কিছুটা উন্নতি করেছেন বলতে হবে। উইয়ান মুল্ডারের বলে আউট হওয়ার আগে করেছেন যে ৬ রান! অর্থাৎ, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের তিন ইনিংসের একটিতেও যেতে পারেননি দুই অঙ্কের ঘরে।

অধিনায়ককে হারানোর পর মুশফিক ও লিটন দাস মিলে প্রাথমিক চাপ কাটানোর চেষ্টা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে টেস্টে আলো ছড়ানো লিটন ছিলেন আশার আলো হয়ে। তবে পোর্ট এলিজাবেথের প্রথম ইনিংসে সুবিধা করতে পারেননি। ১৪ বলে ১১ রান করে ডুয়ান অলিভিয়েরের চমৎকার ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে গেছেন। এরপর দিনের বাকিটা পার করে দিয়েছেন মুশফিক ও ইয়াসির।

দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সফল বোলার মুল্ডার। এই পেসার ৬ ওভারে ১৫ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। অন্যদিকে অলিভিয়ের ৯ ওভারে ১৭ রানে পেয়েছেন ২ উইকেট।

এর আগে প্রোটিয়াদের লেজের ধাক্কায় রান পাহাড়ে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। কেশব মহারাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর সাইমন হার্মার প্রতিরোধ গড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে। তাইজুল ইসলাম টেস্ট ক্যারিয়ারের দশম ৫ উইকেট পূরণ করে ১৫০ উইকেটের দেখা পেলেও সময়টা ভালো যায়নি বাংলাদেশের।

টস জিতে প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়ারা ব্যাট করেছে ১৩৬.২ ওভার। যেখানে সর্বোচ্চ রান এসেছে মহারাজের ব্যাট থেকে। ডানহাতি ব্যাটার টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসে গড়ে খেলেছেন ৮৪ রানের ইনিংস। এর আগে ডিন এলগারের ৭০, তেম্বা বাভুমার ৬৭, কিগার পিটারসেনের ৬৪ রানে ভর করে বিশাল সংগ্রহ গড়েছে প্রোটিয়ারা।

সাকিব আল হাসানের পর দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্টে ১৫০ উইকেট পূরণ করেছেন তাইজুল। হার্মারকে আউট করে মাইলফলকটি স্পর্শ করেন বাঁহাতি স্পিনার। ৩৬ টেস্টে তার উইকেট এখন ১৫০। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে সবচেয়ে সফল বোলারও তিনি। অসাধারণ পারফরম্যান্সে ৫০ ওভার বল করে ১৩৫ রান খরচায় নিয়েছেন ৬ উইকেট। খালেদ আহমেদ ২৯ ওভারে ১০০ রান দিয়ে পেয়েছেন ৩ উইকেট। আর মেহেদী হাসান মিরাজের শিকার ১ উইকেট।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ