কিমকন্যাকে ঘিরে রহস্য বাড়ছে

ধীরে ধীরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে আসছে উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং-উনের কন্যা—যাকে অনেকে কিম জু এ নামেই জানেন। তার বয়স অনুমান করা হচ্ছে ১২ বা ১৩ বছর। যদিও সরকারিভাবে তার নাম বা বয়স কখনো প্রকাশ করা হয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছে, উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে তাকেই প্রস্তুত করা হচ্ছে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, সম্প্রতি বাবার সঙ্গে চীনে প্রথম বিদেশ সফর আলোচনাকে আরও জোরালো করেছে। কিম জং-উনের এই সফর ছিল বিশ্বনেতাদের বড় সমাবেশে তার প্রথম উপস্থিতি। সেখানেই দেখা যায়, ট্রেন থেকে নামার সময় বাবার ঠিক পেছনে ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী চোয়ে সন হুইয়ের আগে দাঁড়িয়ে আছে জু এ। দূতাবাস কর্মকর্তাদের অভ্যর্থনা গ্রহণের সময় তাকে হাততালি দিতে দেখা গেছে। পরে ট্রেনের ভেতর গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বাবার পাশে বসে ছিল সে।

১১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএস) জানিয়েছে, এই সফরের মাধ্যমে কিম জু এর অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়েছে। তাদের মতে, চীন সফরটি মূলত তাকে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা দেওয়ার পাশাপাশি উত্তরাধিকারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠার কৌশল। এই প্রসঙ্গে দেশটির আইনপ্রণেতা পার্ক সনওয়ন বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার সরকারি টিভি ও সংবাদপত্রে জু এর উপস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশেই প্রচারিত হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কখনোই তার নাম প্রকাশ করেনি। তাকে সব সময় ‘সম্মানিত’ বা ‘অত্যন্ত প্রিয় কন্যা’ হিসেবে উল্লেখ করে থাকে। কিম জু এ নামটি আলোচনায় আসে সাবেক মার্কিন বাস্কেটবল তারকা ডেনিস রডম্যানের সূত্রে, যিনি ২০১৩ সালে পিয়ংইয়ং সফরের সময় কিম জং-উনের এক কন্যাকে কোলে নিয়েছিলেন বলে জানান।

কিম জু এ-কে প্রথমবার জনসমক্ষে দেখা যায় ২০২২ সালের নভেম্বরে, একটি আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার সময়। সাদা কোট ও লাল জুতা পরে বাবার হাত ধরে সে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ দেখতে এসেছিল। এরপর থেকে সামরিক মহড়া, নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার উদ্বোধন, অর্থনৈতিক প্রকল্প এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তাকে নিয়মিত দেখা যাচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দারা মনে করছেন, সুপরিকল্পিত এসব উপস্থিতি উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতা উত্তরাধিকারের ইঙ্গিত বহন করছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ ভিন্নমত পোষণ করেন। তাঁদের মতে, কিম জং-উন এখনো তরুণ এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতার কাঠামো পুরুষপ্রধান; তাই এত দ্রুত কন্যাকে উত্তরাধিকারী ঘোষণা করা বাস্তবসম্মত না-ও হতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতার ইতিহাস বলছে, দেশটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পুরুষ উত্তরাধিকারীর হাতে নেতৃত্ব এসেছে—কিম ইল সুং থেকে কিম জং-ইল এবং সেখান থেকে বর্তমান শাসক কিম জং-উনের হাতে। এই প্রেক্ষাপটে কিম জু এ-র উত্থান উত্তর কোরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ