সাইবার অপরাধ ঠেকাতে নতুন গাইডলাইন

ইন্টারনেটভিত্তিক সাইবার অপরাধ ঠেকাতে নতুন গাইডলাইন বা নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগসহ (সিআইডি) সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ওই নির্দেশিকা তৈরি করেছে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের  অপরাধমূলক বা কনটেন্ট ছাড়া হলেও তার সামান্যই অপসারণ করা হতো। ফেসবুক বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিজস্ব পলিসি তথা ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন’ লঙ্ঘন না করার যুক্তিতে সেসব  কনটেন্ট থেকে যেত। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মূলত কী প্রক্রিয়ায় সহজে ইন্টারনেটভিত্তিক অপরাধমূলক কনটেন্ট প্রতিরোধ, ব্লক বা রিমুভ করা যাবে তা নিয়েই সুনির্দিষ্টভাবে তৈরি করা হয়েছে নতুন গাইডলাইনটি, যা মূলত ভুক্তভোগী ব্যক্তি এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ওই গাইডলাইনের একটি কপিও এসেছে খবরের কাগজের হাতে। গত ১৪ ডিসেম্বর এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে, যা অনুসরণ করতে শুরু করেছেন সিআইডিসহ আইন প্রয়োগকারী অন্যান্য সংস্থা বা সংশ্লিষ্টরা।

 

সিআইডির সাইবার ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, ফেসবুক, গুগলসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে পরিমাণ রিপোর্ট বা অভিযোগ দেওয়া হতো তার মাত্র ১০ শতাংশ বা তারও কম বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। যেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তানসহ অন্য রাষ্ট্রগুলো প্রায় ৮০ শতাংশ অভিযোগের সুরাহা পেয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে মূলত অভিযোগের প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ না করার বিষয়টিকেই দায়ী করে থাকে ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষ।

 

এ বিষয়ে আলাপকালে সিআইডির (সাইবার ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার) অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম আশরাফুজ্জামান দোলা খবরের কাগজকে বলেন, ‘যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ না করার ফলে আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো থেকে ভালো ফলাফল খুব বেশি পাওয়া যেত না। এখন নতুন ওই গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে। সিআইডি সদর দপ্তর থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

 

নতুন ওই নির্দেশিকায় যা বলা হয়েছে

 

আপত্তিকর কনটেন্টের লিংক অ্যাড্রেসের পাশাপাশি যদি আপত্তিকর কনটেন্টটি একটি ভিডিও কনটেন্ট হয়, তবে ভিডিও কনটেন্টের কোন অংশটুকু আপত্তিকর তার শুরুর সময় ও শেষ  হওয়ার সময় অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে। শুধু সম্পূর্ণ ভিডিও লিংক দিলে হবে না। এ ছাড়া আপত্তিকর কনটেন্টটি যদি কোনো স্ট্যাটাস/পোস্ট/ছবি ইত্যাদি হয়, তবে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ করে দিতে হবে। পাশাপাশি কনটেন্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইনের’ কোন ক্যাটাগরিতে লঙ্ঘন/ব্যত্যয়/অমান্য করছে তার উল্লেখ করতে হবে। অন্যদিকে কনটেন্টটি আপত্তিকর হিসেবে বিবেচনার কারণ কী, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট করে ব্যাখ্যা করতে হবে।

 

ওই নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘এখন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট অপসারণের লক্ষ্যে বিটিআরসির নির্দেশিকা অনুযায়ী সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রতিরক্ষা বাহিনী, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি, এনটিএমসি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বিটিআরসির ডিজিটাল নিরাপত্তা সেল ইত্যাদিসহ সবাইকে রিপোর্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো।’

 

তিন ধরনের বিষয়কে অগ্রাধিকার

 

এ নির্দেশিকায় তিন ধরনের বিষয় বা ক্যাটাগরিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর একটি ক্যাটাগরি হচ্ছে- ক্রিটিক্যাল; যার মধ্যে রয়েছে- দাঙ্গা, হানাহানি, হত্যাকাণ্ড, ধর্মীয় উসকানি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ইত্যাদি, যা দেশে অরাজকতার সৃষ্টি করে এবং জনসাধারণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে এমন কনটেন্ট। দ্বিতীয়টি- ‘হাই’ বা উচ্চ ক্যাটাগরি; এতে রয়েছে রাষ্ট্রবিরোধী কনটেন্ট, যা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করতে পারে এমন মিথ্যা বা অসত্য কনটেন্ট, নারী ও শিশু নির্যাতন, হয়রানি ও যৌন নিপীড়নমূলক কনটেন্ট ইত্যাদি। তৃতীয় ক্যাটাগরিতে রয়েছে ‘রেগুলার’ বা নিয়মিত, যা সাধারণত প্রোফাইল বন্ধকরণ, প্রোফাইল পুনরুদ্ধার, হ্যাকড প্রোফাইল রিপোর্ট করণসহ অন্যান্য বিষয়।

 

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ