আ.লীগের পদবঞ্চিতরা হতাশ অপেক্ষা মনোনয়ন পর্যন্ত

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমদ সোহেল তাজ কিছু দিন আগে হাঁকডাক করে দলে সক্রিয় হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তার নাম নেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকায়। আওয়ামী লীগে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে সোহেল তাজের কোনো গতি হয়নি। অপরিবর্তিত রয়ে গেছে সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলীসহ সাংগঠনিক সম্পাদকদের পদ। ঢাকাসহ সারা দেশের নেতারা পদ না পেয়ে চরম হতাশ। এসব নেতা বলছেন, এবারের সম্মেলনে তারা বঞ্চিত হয়েছেন। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা পর্যন্ত তারা অপেক্ষা করবেন।

শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে সামান্য রদবদল ছাড়া পুরোনোদের রেখে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। ওই দিন ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদের ৪৮ নেতার নাম ঘোষণা করা হয়। যেখানে একজনও নতুন মুখ ছিল না। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে দলের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের শূন্যপদে ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজাকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন পর্যন্ত মাশরাফিই একমাত্র সৌভাগ্যবান ব্যক্তি যিনি নতুন হিসাবে জায়গা পেলেন।

কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে পদপ্রত্যাশী নেতাদের অসন্তোষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোগাবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ তথ্য জানিয়ে মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এই অসন্তোষ দূর করতে না পারলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হতাশ ও অসন্তুষ্ট নেতারা দলের হয়ে নির্বাচনে কাজ করবেন না। এমনকি বিএনপিকে রাজপথে মোকাবিলার ক্ষেত্রে পদবঞ্চিতরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে না-ও আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কতটা সফল হবে সে প্রশ্ন পদবঞ্চিতদের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় সম্মেলনে গণতান্ত্রিকভাবে দলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। পুরোনোরা বেশিরভাগই নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিলরদের চোখের ও মনের ভাষা শেখ হাসিনা বোঝেন। সে অনুযায়ী তিনি নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করেছেন।

তবে পদবঞ্চিত নেতারা বলছেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা কাউন্সিলরদের চোখ ও মনের ভাষা পুরোপুরি বুঝলে বিতর্কিত এবং দুর্নীতিবাজ নেতাদের অপসারণ করতেন। তাদের মতে, সভাপতিমণ্ডলী থেকে যে তিন জন নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই। একজনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়েছে। তাদের আরো আগে বাদ দিতে পারলে ভালো হতো। তারপরেও এবার বাদ দেওয়ায় দল উপকৃত হয়েছে। সভাপতিমন্ডলীতে আরও একাধিক নেতা রয়েছেন, যারা এলাকায় জনবিচ্ছিন্ন। সরকারে থেকে অসৎ উপায়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এদেরও বাদ দেওয়া প্রয়োজন।

তাদের মতে, কয়েকজন সাংগঠনিক সম্পাদক তো লাগামহীনভাবে দুর্নীতি করেছেন। জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দেওয়া, চেয়ারম্যান এবং মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বলে এই সাংগঠনিক সম্পাদকরা কর্মীদের কাছ থেকে আদায় করেছেন কোটি কোটি টাকা, যা দলের হাইকমান্ডও জানে। তা সত্ত্বেও দুর্নীতিবাজ সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ পদে বহাল রয়ে গেছেন। নেতাকর্মীদের ধারণা, এই সব সাংগঠনিক সম্পাদক এখন আর কোনো রাখঢাক করবেন না। প্রকাশ্যে পদ বিক্রি করবেন। কারণ তারা জেনে গেছেন, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি করেও পদ নিয়ে দলে টিকে থাকা যায়। তাই সম্মেলন শেষ হওয়া মাত্রই ব্যাকডেটে উপজেলা কমিটি দেওয়া শুরু করেছেন। যে কমিটি সম্পর্কে জানেন না জেলা কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও। বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে নেত্রকোনার একটি থানা কমিটি গঠন করা হয়েছে এভাবে। যেখানে স্বাক্ষর করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। এই কমিটি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে।

ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা যুগান্তরকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ হাইকমান্ড নির্বাচনের আগে নতুনদের নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায়নি বলে আগের কমিটির নেতাদের নিজ পদে বহাল রেখেছে। কিন্তু যারা বিতর্কিত, জনবিচ্ছিন্ন তারা আসলেই কি ঝুঁকিমুক্ত? এই নেতা মনে করেন, এটা একধরনের প্রশাসনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মতোই হয়েছে। অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য কারও ভাগ্যে চুক্তির কারণে আরও কয় বছর চাকরিতে থাকার সুযোগ তৈরি হয়, তাদের নিয়ে যতই বিতর্ক থাক না কেন। ফলে নতুনরা যায় পিছিয়ে। তারা অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ যেমন পায় না তেমনি মেধার বিকাশ থেকে হয় বঞ্চিত।

প্রশাসনের মতো এইভাবে ছাত্র ও যুবলীগের একঝাঁক সাবেক নেতার ভাগ্য আবারও ঝুলে গেছে। তারা দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এমপি হতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত অনেকে আশায় ছিলেন অন্তত এবার সংগঠন করার সুযোগ পাবেন। সেখানেও হোঁচট খেলেন তারা। ফলে আগের মতোই এবারও তাদের আওয়ামী লীগের উপ-কমিটির সদস্য হয়ে পরবর্তী তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। যদিও ক্ষুব্ধ এসব নেতা বলছেন, এবার তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। তারপর ভেবেচিন্তে রাজনীতির ব্যাপারে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন।

এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, সভাপতিমণ্ডলী, সম্পাদকমণ্ডলীসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ মিলিয়ে এখনও ৩২টি পদ শূন্য রয়েছে। এ পদগুলোতে তাদের (পদবঞ্চিত) ‘একোমোডেট’ করা যায়। তবে সম্পাদকমণ্ডলী তাদের জন্য উপযুক্ত জায়গা। যদিও এখানে শূন্যপদ এখন খুবই কম। তিনি স্বীকার করেন, নতুনদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করার কারণে সংগঠনের সর্বস্তরে একটি নেতিবাচক বার্তা গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যার প্রভাব উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ