যুক্তরাষ্ট্রে চীনের ‘গোপন থানা’

বিশ্বের অন্তত ২১টি দেশে চীনের ‘গোপন পুলিশ স্টেশন’ রয়েছে। পাঁচটি মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত ওই ২১টি দেশের মধ্যে নাম রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রেরও।

আর এতেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)।

বৃহস্পতিবার সিনেটের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির শুনানিতে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এফবিআই পরিচালক ক্রিস্টোফার রে বলেন, আমি এ বিষয়ে খুব উদ্বিগ্ন। আমরা এই (পুলিশ) স্টেশনগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত। খবর রয়টার্স, গার্ডিয়ান।

আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশে রে বলেন, চীনের সরকার আমাদের শহরগুলোতে অননুমোদিত ‘পুলিশ স্টেশন’ স্থাপন করায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। সম্ভবত প্রভাব বিস্তারের জন্য মার্কিন শহরগুলোতে এসব ‘পুলিশ স্টেশন’ স্থাপন করা হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, ইউরোপভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ‘সেফগার্ড ডিফেন্ডারস’ চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে সংস্থাটি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরসহ বিশ্বের প্রধান শহরগুলোতে কয়েক ডজন চীনা পুলিশ ‘সার্ভিস স্টেশন’ রয়েছে। এর পরই সরব হয় মার্কিন কংগ্রেসের বিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা। বিরোধী এই আইনপ্রণেতারা চীনা এসব পুলিশ স্টেশনের প্রভাব সম্পর্কে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের কাছ থেকে উত্তর দাবি করেন। মূলত চীনে ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকারের বিরোধী যেসব মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে আছে, তাদের নজরদারির আওতায় রাখতে দেশে দেশে গোপন পুলিশ স্টেশন স্থাপন করছে বেইজিং। নিউ ইয়র্ক ছাড়াও বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশের অন্তত ২১টি দেশের ২৫ শহরে ৫৪টি পুলিশ স্টেশন রয়েছে চীনের। এসব দেশের তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ডের মতো শিল্পোন্নত ও ধনী দেশের পাশাপাশি রয়েছে নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়ার মতো সংঘাতপূর্ণ দরিদ্র বিভিন্ন দেশও। তবে গোপন এসব স্টেশনের তথ্য চীনের সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ছাড়া খুব কম মানুষই জানে। রয়টার্স বলছে, গোপন এসব পুলিশ স্টেশনগুলো কিছু চীনা নাগরিক বা বিদেশে তাদের আত্মীয়দেরকে ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি করার জন্য চীনে ফিরে যাওয়ার চাপ সৃষ্টিতে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কাজ করছে। এটি তাদের চীনের ইউনাইটেড ফ্রন্ট ওয়ার্ক ডিপার্টমেন্টের কার্যকলাপের সাথেও যুক্ত করেছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির এই সংস্থাটি বিদেশে দলীয় প্রভাব ও প্রচারণার কাজ চালিয়ে থাকে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে চীনের গোপন পুলিশ স্টেশন থাকার কথা স্বীকার করলেও এই বিষয়ে এফবিআইয়ের তদন্তমূলক কাজের বিস্তারিত বিবরণ দিতে অস্বীকার করেছেন ক্রিস্টোফার রে। তিনি বলছেন, কিন্তু আমার কাছে, এটা ভাবা বেশ আপত্তিজনক যে, যথাযথ সমন্বয় ছাড়াই চীনা পুলিশ নিউইয়র্কে দোকান স্থাপনের চেষ্টা করবে। এটি সার্বভৌমত্ব লংঘন করে এবং মানসম্মত বিচারিক ও আইন প্রয়োগকারী কর্মকাণ্ডের প্রক্রিয়াকে বাধা দেয়।

রিপাবলিকান সিনেটর রিক স্কট জিজ্ঞাসা করেন, এ ধরনের অনুমোদনহীন স্টেশনগুলো মার্কিন আইনকে লংঘন করেছে কি-না, জবাবে ক্রিস্টোফার রে বলেন, এফবিআই ‘আইনি বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছে।’

রয়টার্স বলছে, গ্রেগ মারফি ও মাইক ওয়াল্টজসহ মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা গত অক্টোবরে মার্কিন বিচার বিভাগকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন এ-জাতীয় স্টেশনগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে কিনা সেখানে তা জানতে চান তারা।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ