‘ভিটা মাটি ছেড়ে চলে গেলাম, এ গ্রামে আর থাকা হবে না’

চাঁপাইনাববগঞ্জের পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা আয়েস উদ্দিন। দীর্ঘদিন পূর্বে ভাঙনের কবলে পড়ে নদীর ওপার থেকে এপারে ঘর বেঁধে ছিলেন। ফের নদী ভাঙনের কারণে বাড়ির আসবাবপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন। মালামালগুলো ট্রাক্টরের বগিতে ভর্তি করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার সময় তার পড়শিদের বলেন, ‘ভিটা মাটি ছেড়ে চলে গেলাম, এ গ্রামে আর থাকা হবে না।’

আয়েস উদ্দিন বলেন, ‘পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এখন নদীর পাশের বাড়িটাই আমাদের। কোথায় যাবো তার ঠিক ঠিকানা নাই। আপাতত এলাকার ঈদগাহে আসবাবপত্রগুলো রাখছি। নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন আর কিছু রইলো না। ছোট ছোট বাচ্চা, এদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নিবো।’

 

বলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন আয়েস উদ্দিন। পাড়া পড়শিরা শুধু চেয়েই দেখলেন। এ সময় কারো কারো চোখ জলে ঝাপসা হয়ে আসতে দেখা যায়। মনে হচ্ছিলো, তারা যেনো হাসতে ভুলে গেছে।

বলছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জে শিবগঞ্জ উপজেলার নমোজগন্নাথপুর এলাকার পন্ডিতপাড়া গ্রামের কথা।

পদ্মা নদীতে ভাঙন দেখা দেওয়ায় এ গ্রাম থেকে প্রায় ৩৫টি পরিবার ভিটামাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছেন। কেউ উঠেছেন আত্মীয় বাড়িতে কেউবা অন্যের আবাদি জমিতে। যার কোথাও থাকার জায়গা নাই, তারা ঈদগাহ কিংবা কবরস্থানের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এখনও হুমকিতে পন্ডিত পাড়ার শতাধিক পরিবার। নিজেদের শঙ্কামুক্ত করতে অনেক পরিবার আসবাবপত্র গোছাতে শুরু করেছে।

 

পন্ডিত পাড়ার আতাউর রহমান। তিনি জন্মগত থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। কথা না বলতে পারলেও, মানুষের কথা বোঝেন। তার বাবা জালাল উদ্দিন দীর্ঘদিন আগেই মারা গেছেন। এখন বাড়িতে তার মা নুরজাহান বেগম আর তিনি বসবাস করেন। অনেক আগেই তাদের সব জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী আতাউর মানুষের বাড়িতে চেয়ে যা পান, তা দিয়েই তার দিন কেটে যায়। দুজনের জীবন চলছে ধুঁকে ধুঁকে।

আতাউরের মা নুরজাহান বলেন, ‘ভাঙনেই সব জায়গা জমি নদীতে নেমে গেছে। নিজের বলতে এখন কিছুই নাই। দিনদিন নদী আমাদের বাড়ির কাছেই চলে আসছে। কী করবো, কোথায় থাকবো। আমার ছেলেটার যে কেউই নাই। যদি আমি চলে যাই, আমার ছেলের কী হবে।’

 

মায়ের এমন কথা শুনে শুনে আতাউরের চোখের জল টপটপ করে পড়তে লাগল। এ দেখে তার মাও বাছাধন বলে আতাউরের চোখের পানি মুছিয়ে দিলেন। আর তার গায়ে হাত বুলিয়ে হতাশা ভরা কণ্ঠে বলেন, ‘কাঁদিসনা বাপ। এখনও বেঁচে আছে তোর মা।’

পদ্মাপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল মোমিন বলেন, ‘মনোহরপুর থেকে উজিরপুরের বালুর ঘাট পর্যন্ত নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রায় দশ-বারো কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী ভাঙছে। এ নদী আরও প্রায় তিন-চারশ মিটার দূরে ছিলো। সবাই বাড়িঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত।’

 

পন্ডিত পাড়ার আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসান আলী বলেন, ‘নদী ভাঙন দেখতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এসেছিল, কিন্তু ভাঙন রোধে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়নি।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘মনোহপুরে নদী ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। জিওব্যাগ ফেলে কিছুটা ভাঙন রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। পন্ডিত পাড়াতেও শিগগির জিওব্যাগ ফেলা হবে।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ