বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ দাম নাগালের বাইরে

সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে। রাজধানীর কাওরানবাজারেও ইলিশের আমদানি ব্যাপক। শুক্রবার ইলিশের বাজারে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সেখানে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের খুব একটা চোখে পড়েনি। ভরা মৌসুমে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ কিন্তু দাম নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে।

কয়েকদিন ধরে রাজধানীর কাওরানবাজারসহ বেশ কয়েকটি মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে-সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাজারে ক্রেতাদের দেখা মেলে। কখনো কখনো বাজার ছেড়ে রাস্তার মোড়ে, অলিগলিতে ইলিশ বিক্রি করতে দেখা যায়। শুক্রবার বিকালে কাওরানবাজার রেলগেট এলাকায় ইলিশ কিনছিলেন গার্মেন্ট ব্যবসায়ীর স্ত্রী জান্নাতুল কবীর কেয়া।

যুগান্তরকে তিনি জানান, ‘প্রতি বছরই শতাধিক ইলিশ কিনতে হয়। আত্মীয়স্বজনদেরও ইলিশ দিতে হয়। দাম কেমন? ওটা দেখি না। তরতাজা হলে দাম যতই হোক কিনে নিই।’ যাত্রাবাড়ী মাছ আড়তের ইলিশ বিক্রেতা আমিনুল ইসলাম জানান, এখন প্রচুর ইলিশ আসছে। টনের পর টন ইলিশ আসছে। এক কেজির কম, আবার এক কেজির বেশিও ইলিশ আসছে। ১ কেজি ওজনের বেশি ইলিশ ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আড়তে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরাই বেশি আসেন। বিভিন্ন বাজারে নিয়ে তারা বিক্রি করেন। তবে যারা খুচরা ইলিশ কিনতে আসেন, তারা প্রায় সবাই বড়লোক। কেউ কেউ একসঙ্গে ২০ থেকে ৫০টি ইলিশও কিনে নেন। তবে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের তেমন ইলিশ কিনতে দেখা যায় না।

মতিঝিলের শাপলা চত্বর, রামপুরা, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে-বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ। দাম বেশি হলেও বিক্রি হচ্ছে দেদার। রামপুরা বাজারে ইলিশ কিনতে এসেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জিল্লুর রহমান। তিনি জানান, মেয়ে বেড়াতে এসেছে। ৮০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ ৯০০ টাকায় কিনেছেন। এ বছরে এই প্রথম ইলিশ কিনলেন। অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমাদের জন্য ইলিশ না। তার এমন কথা শুনে এক ইলিশ বিক্রেতা মজা করে হাঁক দেন-‘পানির দামে টাটকা ইলিশ।’

বাজার ঘুরে দেখা গেছে-ভরা মৌসুমেও ইলিশের দাম নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। দাম শুনে ইলিশ কেনা থেকে পিছিয়ে আসেন অনেকেই। রাজধানীর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ জানান, জেলেদের কাছ থেকে সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী অথবা আড়তদাররা সরাসরি ইলিশ কিনতে পারলে দাম অনেক কমে আসত। কিন্তু আড়তদারের উপর আড়তদার, এর উপর দাদন ব্যবসায়ী, ফলে-জেলেদের হাত থেকে ইলিশ ছুটার পরপরই দাম দৌড়াতে থাকে। ইচ্ছা থাকলেও দামের কারণে সাধারণ মানুষ ইলিশ কিনতে পারছে না।

কক্সবাজারের পাইকারি মাছ বিক্রির প্রধান বাজার নুনিয়াছটা ফিশারি ঘাটের মৎস্য আড়তদার জিল্লুর রহমান জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষ হতেই কক্সবাজারের প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ ট্রলার সাগরে গেছে। ইলিশ ধরে অসংখ্য ট্রলার প্রতিদিন ঘাটে ফিরছে। আকারভেদে একএকটি ট্রলার ৫০০ থেকে ৯ হাজার ইলিশ নিয়ে ফিরছে। মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ইলিশ প্রচুর ধরা পড়ছে। গত কয়েক বছর ধরে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। এ সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে।

২০১৫ সালে সমুদ্র অর্থনীতির একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছিল। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী-সমুদ্র থেকে আহরিত মাছের ৬০ শতাংশ হলো ইলিশ। বাকি ৪০ শতাংশ অন্যান্য মাছ। মৎস্য অধিদপ্তরের ইলিশ ব্যবস্থাপনা শাখার পরিচালক মাসুদ আরা মমি যুগান্তরকে জানান, নিষেধাজ্ঞা না থাকায় জেলেরা দেদার ইলিশ ধরছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৫.৫৬ লাখ টন ইলিশ আহরণ করা হয়। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ আরও বাড়বে। বাজারে ইলিশের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, ইলিশের দাম নির্ধারণ করার কেউ নেই। বিক্রেতারা নিজেদের মতো করে বিক্রি করেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ