ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যা মামলার বিচার দীর্ঘ ৯ বছরেও শেষ হয়নি। কবে নাগাদ শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
সাক্ষী না আসায়, আসামিদের সময়ক্ষেপণ, করোনাভাইরাসের কারণে মামলার বিচার বেশিদূর এগোয়নি বলে জানান তারা। তবে মামলার বিচার নিষ্পত্তির জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, এবার মামলাটির দ্রুত সুরাহা হবে।
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড বিপণি বিতানের সামনে মিল্কিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মিল্কির ছোট ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় এজাহারনামীয় ১১ জন এবং অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রথমে ১১ জনকে এবং পরে আবার ৭ জনকে অভিযুক্ত করে ১৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এরপর ৭৫ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চার জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এমন অবস্থায় মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ঢাকার দুই নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়েছে। মামলাটি গত ২১ মার্চ ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বদলির আদেশ দিয়েছেন আইন মন্ত্রণালয়। ইতিমধ্যে মামলার নথি সংশ্লিষ্ট আদালতে এসে পৌঁছেছে।
মামলা সম্পর্কে ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘মামলার বিচার আমাদের আদালতে চলছিল। কিন্তু সম্প্রতি মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ বদলি করা হয়। সেখানে মামলাটি পাঠিয়েও দেওয়া হয়েছে।’
মামলার বিচারকার্য ধীর গতি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালত থেকে সাক্ষীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও শুনানিতে সাক্ষী হাজির হননি। আমরা সাক্ষী আনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সাক্ষীরা ঠিকমত সাক্ষ্য দিতে আসে না। এছাড়া আসামিপক্ষ মামলাটির বিচারকাজ লম্বা করার চেষ্টা করে গেছে। তারা চাচ্ছেন মামলাটির বিচার যেন না। সব সময় বাধা দিয়ে গেছে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে গেছে। আশা করছি, সেখানে বিচার দ্রুত শেষ হবে।’
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ আদালতের প্রসিকিউটর নাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, ‘বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে মামলাটি আমাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। চেষ্টা করবো, সাক্ষী হাজির করে বিচার শেষ করতে। আর আসামিদের যেন দৃষ্টান্তমূলক সাজা হয়।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী সিরাজুল হক ফয়সাল বলেন,‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ১৮ জন তো আর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত না। ৩/৪ জন ঘটনাটি ঘটিয়েছে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে অনেককে জড়ানো হয়েছে। আমরাও চাচ্ছি, বিচার যেন শেষ হয়। এতে যারা দোষী তারা সাজা পাবে। আর নির্দোষ যারা তো খালাস পাবে। আশা করছি, আমরা ন্যায়বিচার পাবো।’
২০১৩ সালের ২৯ জুলাই রাতে রাজধানীর গুলশানের শপার্স ওয়াল্ডের সামনে গুলিতে নিহত হন মিল্কি। এ ঘটনায় মিল্কির ভাই রাশেদুল হক খান বাদী হয়ে জাহিদ সিদ্দিকীসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে গুলশান থানায় মামলা করেন।
২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল মামলাটিতে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে র্যাবের সহকারী পুলিশ সুপার কাজেমুর রশিদ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। ওই চার্জশিটের বিরুদ্ধে নারাজি দাখিল করেন বাদী। আদালত নারাজি আমলে নিয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার উত্তম কুমার বিশ্বাস আরও ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
পরে মামলাটি বিচারের জন্য সিএমএম আদালত থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালের ৮ নভেম্বর ১৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু হয় ঢাকার ৫ম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে। এখন পর্যন্ত মামলাটিতে চার জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। মামলাটি বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এ পাঠানো হয়েছে।
মামলার ১৮ আসামি মধ্যে ১৪ জন জামিনে আছেন। চারজন পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন-সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, ফাহিমা ইসলাম লোপা, শরিফ উদ্দিন চৌধুরী ও সৈয়দ মুজতবা আলী। জামিনে আছেন আমিনুল ইসলাম ওরফে হাবিব, সোহেল মাহমুদ ওরফে সোহেল, চুন্নু মিয়া, আরিফ ওরফে আরিফ হোসেন, সহিদুল ইসলাম, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ, জাহাঙ্গীর মণ্ডল, রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, তুহিনুর রহমান ফাহিম, মোহাম্মদ রাশেদ মাহমুদ ওরফে আলী হোসেন রাশেদ, সাইদুল ইসলাম, সুজন হাওলাদার, ডা. দেওয়ান মো. ফরিদউদ্দৌলা ও মামুন-উর- রশীদ।