চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে মোট ছয়টি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে।
বেসরকারি এই ডিপো কর্তৃপক্ষ নিজেরাই একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশন, জেলা প্রশাসন, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অন্য তদন্ত কমিটিগুলো গঠন করে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যের কমিটিতে আছেন টার্মিনাল ম্যানেজার, ডেপুটি ডাইরেক্টর ও চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের উপকমিশনার। তাদের তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাজাহান ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বন্দর থেকে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। অনিয়ম ছিল কি না, তা তদন্ত কমিটি অনুসন্ধান করে বলবে, নিরাপত্তায় বা অগ্নি নির্বাপণে কোনো ঘাটতি ছিল কি না।
রোববার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএম কন্টেইনারের মালিক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট গ্রুপের জিএম (প্রশাসন) অবসরপ্রাপ্ত মেজর শামসুল হায়দার সিদ্দিকীর পাঠানো এক বিবৃতিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
দুর্ঘটনায় নিহত প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে, গুরুতর আহত বা অঙ্গহানির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের ছয় লাখ এবং কম আহতদের প্রত্যেককে চার লাখ টাকা করে দেওয়া হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
এছাড়া নিহতদের মধ্যে কারও পরিবারে শিশু থাকলে সে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত তাদের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে বিএম কন্টেইনারের পক্ষ থেকে। আহতদের চিকিৎসা খরচ বহনের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে কোম্পানিটি।
চট্টগ্রামের বিভাগীয কমিশনার নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন, এর প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে। কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে পাঁচ কার্যদিবস।
সদস্যরা হলেন- পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি জাকির হোসেন খান, চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার আবু নুর রাশেদ আহমেদ, পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার পরিচালক মুফিদুল আলম, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নের মেজর আবু হেনা মো. কাউসার জাহান, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম ও চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। কমিটিতে সদস্য সচিব রাখা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তারকে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটিতে প্রধান করা হয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক বদিউল আলমকে। এই কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে সাত কার্যদিবস।
এছাড়া চট্টগ্রাম কাস্টমসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত কমিশনার শফিউদ্দিনকে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- যুগ্ম কমিশনার তারেক হাসান, সালাহউদ্দিন রিজভী, সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা ও রাজস্ব কর্মকর্তা বিকাশ দাশ।
এই কমিটিতেও সাত কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটিকেও পাঁচ দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
এদিকেবিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯জন ফায়ার সার্ভিসকর্মী।
রোববার বিকালে ফায়ার সার্ভিসের গণমাধ্যম শাখা থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের গুরুতর দুই কর্মীকে চট্টগ্রাম থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হচ্ছে। এ ছাড়াও গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ১৫ জন।
তাদের মধ্যে কুমিরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মী গাউসুল আজম ও সীতাকুণ্ডু স্টেশনের রবিউলকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে। গাউসুলের শরীরের ৮০ শতাংশ এবং রবিউলের ৫০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ২৩ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেই আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে দমকল বাহিনী কর্মীদের।
রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে ২৬টি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম। এ ছাড়া চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী থেকে অফিসাররা যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য সেখানে উদ্ধার অভিযানে কাজ করছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, কনটেইনার ডিপোটিতে বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক ‘হাইড্রোজেন পার অক্সাইড’ ছিল। হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।