৫ আগস্টের আগে জুলাই সনদ করতে হবে: সালাহউদ্দিন আহমেদ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘জুলাই সনদ প্রণয়নের কার্যক্রম চলছে। তবে অত্যন্ত ধীরগতিতে। আমরা সংস্কার কমিশনকে বলেছিলাম, আগস্টের ৫ তারিখের আগে এটি প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু যে ধীরগতি লক্ষ্য করছি, তাতে আমার কাছে মনে হয় এই সময়ের মধ্যে কী আপনারা এই কাজ করতে পারবেন?’

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থানের বাক বদলের দিন’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ছাত্রদল। এতে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় অন্যান্য ছাত্রসংগঠনের নেতারাও বক্তব্য দেন। তবে ছাত্রশিবিরের কেউ ছিলেন না।

সালারউদ্দিন বলেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্রের ভাষ্য আমরা পাঁচ মাস আগে জমা দিয়েছি। গত ৯ তারিখে একটি পরিমার্জিত ভার্সন চেয়েছে, আমি নিজে গিয়ে জমা দিয়েছি। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের যথাযথ মর্যাদা ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমরা দেব। সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে তার বর্ণনা থাকবে। ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তা বৈধতাও সেখানে থাকবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নামে কোনো রাজনীতি হবে না। রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, এমপি, মন্ত্রী এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মানবতাবিরোধী অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন সবার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।’

সালার উদ্দিন আরও বলেন, ‘তবে আমরা যদি হাজারে হাজারে বিচার করি তাহলে জাতিকে সবসময় বিচার এবং প্রতিশোধের বিভক্তির মধ্যে থাকতে হবে। সেজন্য ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে জাতির মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটি আইনের মাধ্যমে ঠিক করতে হবে। যেটা দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ইউরোপের আরও কয়েকটা দেশে হয়েছে।’ তবে অবশ্যই যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ, গুম, খুন, হত্যাযজ্ঞে জড়িত, সে যে বাহিনীর হোক, তাকে ক্ষমা করা হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা কুরুচিপূর্ণভাবে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে সম্বোধন করেছিল। এরপর তার পেটুয়া বাহিনী, হেলমেটলীগ পুরো ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে মেয়েদের ওপর হামলে পড়ে, সেটা ইতিহাসে লেখা থাকবে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিল সেখানেও হামলা করেছিল। এটা খুবই বর্বর, নির্মম ছিল। এর প্রতিবাদ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল। এটাই ছিল আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। সেদিন থেকে শেখ হাসিনার পতনযাত্রা শুরু হয়। ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাঁচ আগস্ট এসেছিল।’

তিনি বলেন, ‘দেশ আজকে সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এক বছরে আমরা শহীদের বিচার দেখতে পাইনি, বৈষম্যহীন সমাজ দেখতে পাইনি। আমরা দেখতে পেয়েছি- কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি, একটি দলকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা দিয়ে হেনস্তা করা যায়। সংস্কারের নামে আমরা আর কোনো কিছুই দীর্ঘায়িত করতে দিতে চাই না। একটি একটি নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন চাই।’

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের বিচারের প্রক্রিয়া আমরা এখনও লক্ষ্য করিনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যেও বিচার চাওয়ার কোনো প্রবণতা দেখিনি। আমরা প্রশাসনকে চিঠি, স্মারকলিপি দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নামকাওয়াস্তে লিস্ট প্রকাশ করেছে, কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে বিচারের পদক্ষেপ কেউ শুরু করতে পারেনি। এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে নিতে হবে।’

ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর আহ্বায়ক জাবির আহমেদ জুবেল, ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান নাহিয়ান, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের শুভাশিস চাকমা, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি মাহদী হাসান শিকদার, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ছাত্র আন্দোলন এনডিএম-এর মাসুদ রানা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দীন মুজাহিদ মাহী প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ