হাতিকে চাঁদা না দেয়ায় শুঁড়ে তুলে আছাড়, ফার্মেসি মালিকের মৃত্যু

পথ আটকে এক নারীর কাছে চাঁদা চাইল চাঁদাবাজির প্রশিক্ষণ পাওয়া হাতি। নারী ভয়ে পাশের ওষুধের ফার্মেসিতে আশ্রয় নিল। হাতিও তার পিছু ছুটল। ফার্মেসি মালিক নারীকে বাঁচাতে ছোট এক লাঠি নিয়ে বের হলো।

এতে ফার্মেসি মালিকের সাথে বিতণ্ডায় জড়াল মাহুত। এর মধ্যেই ফার্মেসি মালিককে শুঁড় দিয়ে শূন্যে তুলে আছাড় দিল ওই হাতি। আছাড়ে ফার্মেসি মালিকের নাক-মুখ থেতলে যায়।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান ওই ফার্মেসি মালিক। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের নগুয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

হাতির আছাড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মাসুদুর রহমান (৪৫)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার সিংগাইর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে।

মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে কিশোরগঞ্জ শহরে বসবাস করে আসছিলেন। ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালসের সাবেক এরিয়া ম্যানেজার তিনি। গত কয়েক বছর আগে নগুয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ‘এ আর ফার্মা’ নামে তিনি একটি ফার্মেসি (ওষুধের দোকান) দেন। এ দোকানের সামনেই এই ঘটনা ঘটে।

এলাকাবাসী জানান, কিশোরগঞ্জের রাস্তাঘাটে দোকানে হাতি দিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এলাকার মানুষকে ত্যক্ত বিরক্ত করা হয়। চাঁদা না দেয়ায় কোনো হাতির এভাবে শুঁড়ে তুলে আছাড় মারায় মানুষ আতঙ্কিত।

এ ঘটনায় হাতি এবং হাতির মাহুত রিয়াজুল মোল্লাকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। মাহুত রিয়াজুল গোপালগঞ্জ জেলা সদরের মরহুম আছমত মোল্লার ছেলে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাতির চাঁদাবাজি নিয়ে মাসুদুর রহমান আর মাহুতের কথা-কাটাকাটি চলছিল। একপর্যায়ে মাসুদ তার হাতে থাকা ছোট লাঠি নিয়ে হাতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় হাতি ক্ষিপ্ত হয়ে মাসুদকে শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে শূন্যে তুলে ফেলে। এরপর সজোরে ছুড়ে ফেলে দেয়। কাছের এক দোকানের দেয়ালে গিয়ে আছড়ে পড়েন মাসুদ। এতে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরা জানান, সন্ধ্যার আগে হাতি নিয়ে রিয়াজুল কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়া এলাকায় ঢোকে। হাতিকে দিয়ে দোকানপাট, পথচারী ও চালকদের কাছ টাকা নিচ্ছিল সে। রাস্তায় চলাচল করা নারী ও শিশুদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছিল। এতে নারী শিশু বেশ কয়েকজন ভয় পায়।

মাসুদুরকে হাতি যখন শুঁড় দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে, তখন সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। ভয়ে এদিক সেদিক সবাই ছোটাছুটি করতে থাকে।

হাতির মাহুত জানায়, ১০-১২ দিন আগে আগে তিনি হাতি নিয়ে বের হয়েছেন। সারাদেশেই এই হাতি দিয়ে টাকা সংগ্রহ করা হয়। হাতির মালিক গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইন এলাকার এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এবং আওয়ামী লীগ নেতা।

কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তাফা ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় হাতি ও হাতির মাহুতকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, শেরপুরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ ন ম আব্দুল ওয়াদুদ জানান, বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে হাতি পালনের নিয়ম রয়েছে। তবে হাতি দিয়ে টাকা তোলা বা চাঁদাবাজির কোনো নিয়ম নেই। এগুলো স্থানীয় প্রশাসন দেখবে ও দমন করবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ