সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

কাউন্টার থেকে সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ছাড়া গ্রাহক পর্যায়ে ছেঁড়াফাটা নোট বদল কিংবা অটোমেটেড চালান সেবাও আর দেবে না ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস এসব সেবা বন্ধ করে দিচ্ছে।

পর্যায়ক্রমে ঢাকার বাইরে অন্য সব অফিস থেকেও আর এসব সেবা মিলবে না। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে এসব সেবা দেয় তা নিশ্চিত করতে তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্রাহকদের এসব বিষয়ে অবহিত করতে শিগগিরই প্রচারণা চালানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর সব ব্যাংক শাখায় প্রাইজবন্ড পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলো ছেঁড়াফাটা নোট বদল ও অটোমেটেড চালান সেবাও দেয়। তবে ভোগান্তিমুক্ত সেবা ও আস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকেই বেশি ভিড় করেন গ্রাহক। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে গ্রাহকদের তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে।

গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের সার্ভার জালিয়াতি করে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আত্মসাতের ঘটনা ধরা পড়ে। আরও দুইজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা শেষ সময়ে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের তদন্ত কমিটি কাজ করছে। এরপর থেকে মতিঝিল অফিসের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রের সার্ভার জালিয়াতিকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের বিভিন্ন সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে, তেমন নয়।

ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাবের সভাপতি এএইচএম সফিকুজ্জামান সমকালকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কখনও বাণিজ্যিক কার্যক্রম করার কথা নয়। এ ধরনের কাজ করলে শত শত মানুষ সেখানে ভিড় করলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়া স্বাভাবিক। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ধরনের সেবা বন্ধ করে দেওয়া দোষের কিছু নয়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেখতে হবে, এই সেবা বন্ধের কারণে যেন অন্য ব্যাংকগুলোতে ভোগান্তি না হয়। ব্যাংকসহ অন্যসব প্রতিষ্ঠান যেন ঠিকমতো এসব সেবা দেয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসের মোট ২৮টি কাউন্টার থেকে বর্তমানে চার ধরনের সেবা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২টি রেখে বাকি সব বন্ধ করা হবে। ১২টি কাউন্টার ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করবে। গ্রাহক পর্যায়ে কোনো লেনদেন হবে না। বিদ্যমান কাউন্টারের মধ্যে বর্তমানে ছেঁড়াফাটা নোট বদল-সংক্রান্ত কাউন্টার রয়েছে ৮টি এবং কয়েন বা ধাতব মুদ্রা লেনদেন কাউন্টার দুটি। এর মধ্যে ছয়টি চালু থাকবে। ট্রেজারি চালান-সংক্রান্ত পাঁচটি, প্রাইজবন্ড বিনিময় কাউন্টার দুটি, সঞ্চয়পত্র বিক্রি ও মুনাফা দেওয়া সংক্রান্ত দুটি এবং স্মারক মুদ্রা বিক্রয় কাউন্টার রয়েছে একটি।

সঞ্চয়পত্র, প্রাইজবন্ড ও চালান-সংক্রান্ত একটি করে কাউন্টার থাকবে। আর চালান গ্রহণের তিনটি আদান কাউন্টার চালু রেখে বাকি সব বন্ধ করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, বরিশাল অফিস থেকেও গ্রাহক পর্যায়ে এসব সেবা বন্ধ করা হবে। ঠিক কবে বন্ধ হবে এখনও তা ঠিক হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেন। এরপর একটি কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমিটির সুপারিশে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এর আগে গত ১৮ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর করণীয় নির্ধারণে বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা। সেখানে আলোচনা হয়, এর আগে দুইজন গভর্নর গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তবে ওই সময়ের প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিশ্বের কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এভাবে কাউন্টার থেকে সরাসরি সাধারণ মানুষকে সেবা দেওয়া হয় না। কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংকও গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে গ্রাহকদের যেন কোনো ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে না হয় সে জন্য তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। ব্যাংকগুলো যেন ছেঁড়াফাটা নোট দ্রুত বদল করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হবে। সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ ও আসল পরিশোধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইএফটিএন ব্যবস্থা সচল থাকবে। এ ছাড়া এসব কাউন্টারে কর্মরতদের অন্যান্য জায়গায় বহাল করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ