ইতালীয় সরকার কর্তৃক সম্প্রতি ঘোষিত ‘ডিক্রিটো ফ্লুসি’ বা অভিবাসী শ্রমিক আগমন সংক্রান্ত ডিক্রির নতুন ঘোষণা কৃষি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রমিকের ঘাটতি মেটানোর জন্য এক ধরনের স্বস্তি এনেছে। ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের জন্য নন-ইউরোপীয় শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করা হলেও ইতালিয়ান কৃষক সংস্থা (সিআইএ) টেন্টিনো’র প্রেসিডেন্ট পাওলো ক্যালোভি মনে করেন শুধু সংখ্যা বৃদ্ধিই এই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান নয়।
ক্যালোভি নিশ্চিত করেছেন, শ্রমিক সংকট কেবল কৃষিতেই নয় সব ক্ষেত্রেই বিদ্যমান। তবে কৃষি খাতে বিশেষত স্বল্প ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিপুল শ্রমিকের প্রয়োজন হওয়ায় সমস্যাটি তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন ডিক্রি অনুযায়ী ২০২৬ সালের জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫০, ২০২৭ সালের জন্য ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮৫০ এবং ২০২৮ সালের জন্য ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিককে ইতালিতে কাজের জন্য প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যা পূর্ববর্তী সময়ের তুলনায় ৫০ হাজার ইউনিট বেশি।
কৃষির জন্য কোটা বৃদ্ধি: কৃষি খাতের জন্য বিশেষ করে টেন্টিনো’র কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মৌসুমী কাজের ক্ষেত্রে কোটা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এই কোটা ২০২৬ সালে ৮৮ হাজার, ২০২৭ সালে ৮৯ হাজার এবং ২০২৮ সালে ৯০ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
ইউরোপীয় শ্রমিকের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতি: পাওলো ক্যালোভি বলেন অতীতে রোমানিয়ান, পোলিশ এবং স্লোভাকদের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নের শ্রমিকরা কৃষি খাতের জন্য অপরিহার্য ছিলেন। কিন্তু গত ২০ বছরে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হওয়ায় এবং নিজ দেশে বাড়ি কেনার কারণে তারা এখন প্রায়শই ছুটিতে চলে যান বা আর কাজ করতে আসেন না। এই পরিবর্তন স্থানীয় কৃষি শিল্পে কর্মী সরবরাহকে কঠিন করে তুলেছে, কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন আর পূর্বের কর্মীদের ওপর নিয়মিত নির্ভর করতে পারছে না।
স্থায়ী সমস্যা ও প্রয়োজনীয় সমাধান: যদিও নতুন ডিক্রি কিছুটা সাহায্য করবে তবুও বেশ কিছু মৌলিক সমস্যা রয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ক্যালোভির মতে, শ্রমিকদের মধ্যে যোগ্যতার অভাব এবং ভাষার সমস্যা একটি বড় বাধা। যোগাযোগে অসুবিধা সরাসরি কর্মীদের নিরাপত্তার মানকেও প্রভাবিত করে। তিনি মনে করেন পাকিস্তান, ভারত এবং উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য ইতালিতে আসার আগে ভাষার ওপর সামান্য প্রশিক্ষণ নেওয়া জরুরি।
তিনি আর্জেন্টিনার সাথে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মতো উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যেখানে ট্রাক চালক এবং মেকানিকরা নিজ দেশে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আসেন।
‘ভাউচার’ পদ্ধতির পুনঃপ্রবর্তন অপরিহার্য: ক্ষুদ্র ও বৃহৎ উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্যই আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাজ পেতে বাধা সৃষ্টি করে। ক্যালোভির মতে সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য ‘ভাউচার’ বা কাজের কুপন পদ্ধতি পুনরায় চালু করা অপরিহার্য। এই পদ্ধতি মৌসুমী ফসল তোলার সময় বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়।
ভাউচারের সুবিধা: এটি কাজকে আরও নমনীয় করে তোলে, আমলাতান্ত্রিক চাপ কমায়, আইনগত বৈধতা নিশ্চিত করে, কর পরিশোধে সাহায্য করে এবং বীমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক্যালোভি আশা প্রকাশ করেছেন যে ট্রেড ইউনিয়ন এবং রাজনৈতিক মহলকে এটি কৃষি খাতের জন্য একটি কার্যকর ও বৈধ ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিতে রাজি করানো সম্ভব হবে।