শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি

শীর্ষ দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি ও টাকা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সরকার এবং বিরোধীদলের সংসদ-সদস্যরা। তারা এ সময় বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।

এমন প্রস্তাবিত বাজেটে বিনা বাক্যে পাচারের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তা বাতিলেরও দাবি জানান সংসদ-সদস্যরা। রোববার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তারা।

আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ-সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে শীর্ষ ঋণখেলাপি, অর্থ পাচারকারী এবং শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের আইনের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে পারলে দেশ থেকে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার কমবে। তিনি আরও বলেন, একশজন নয়, পঞ্চাশজন নয়। মাত্র ১২ জন শীর্ষ দুর্নীতিবাজকে যদি আইনের আওতায় এনে শাস্তি দিতে পারি, আমার বিশ্বাস দেশ থেকে পঞ্চাশভাগ দুর্নীতি কমে আসবে। অর্থ পাচার ও লুটপাট বন্ধ হবে। আমার কথা যদি সত্যি না হয়, তাহলে স্বেচ্ছায় সংসদ-সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দেব।

জাতীয় পার্টির সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার শামিম হায়দার পাটোয়ারি বলেন, পদ্মা সেতু উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রতীক। তবে কেবল ইট-পাথরের সেতু নির্মাণ করলেই একটি দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন এবং অগ্রগতি নিশ্চিত হবে না। এর জন্য দরকার সরকার ও বিরোধীদলের মধ্যেও সেতুবন্ধ। সরকারকে সেই সেতুবন্ধ তৈরির জন্যও উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গুলশানে দারিদ্র্যের হার ১ ভাগেরও কম। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে দারিদ্রের হার ৯৮ ভাগেরও বেশি। এই চরম বৈষম্য সমাজ থেকে দূর করতে না পারলে দেশে প্রকৃত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে না। ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বিদেশে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার ক্ষেত্রে দায়মুক্তি প্রদানের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন, কেউ ব্যাংক ডাকাতি করে, দুর্নীতি করে বিদেশে টাকা পাচার করে-তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও ফৌজদারি মামলা রয়েছে, তারা এই সুবিধা ভোগ করতে পারবে না।

একই দলের পীর ফজলুর রহমান বলেন, টাকা পাচারের দায়মুক্তি দিলে পাচারকারীরা কর দিয়ে সর্বোচ্চ করদাতা পুরস্কার পাবেন। তারাই হয়ে যাবেন সেরা করদাতা। তিনি আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী বিদেশে টাকা পাচার আটকাতে ব্যর্থ হয়েছেন। পাচার করা টাকা ফেরত আনার সুযোগ থাকলে মানি লন্ডারিং আইনের প্রয়োজন নেই।

তিনি বলেন, করোনাকালে অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে খারাপ অবস্থায় চলে গেছেন। কিন্তু এই অর্থবছরেও অনেকে কোটিপতি হয়েছেন। বিদেশে অর্থ পাচারও বেড়েছে।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে দরিদ্রের হার কমেছে বলে সরকার যে আত্বতৃপ্তিতে ভুগছে, এর প্রমাণ পাওয়া যায় টিসিবির গাড়ির পেছনের লাইন দেখলে। সেখানে ক্যানসারের রোগী থেকে ৫ বছরের শিশুও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে দিনভর। পরে মাল না পেয়ে ফিরতে বাধ্য হচ্ছে।

রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান বাড়ছে। দেশে চিকিৎসা ব্যয় এমনভাবে বাড়ছে, যে কোনো পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে সে সংসারে দুর্যোগ নেমে আসে। তিনি বলেন, ২৭ মন্ত্রণালয়ের সম্পূরক বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এডিবির ৫৮ শতাংশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার বরাদ্দের ৪১ শতাংশ ১১ মাসে ব্যয় করতে পারেনি। অথচ এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের কোনো জবাব দিহি চাওয়া হয়নি।

বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের সমালোচনা করে রুমিন বলেন, ভোজ্য তেলের দাম আকাশ ছোঁয়া । কয়েকজন তেলমিল মালিক ও বাণিজ্য মন্ত্রনালয় মিলে একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে ভোজ্য তেলেই শুধু কয়েক মাসে ১ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। এ লুটপাটের অর্থ কতদুর পর্যন্ত ভাগ বাটোয়ারা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।

সরকারি দলের অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত পাচারকারীদের অর্থ ফেরত আনলে জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি প্রদানের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করে বলেন, বিষয়টি মানুষ ভালোভাবে দেখছেন না। পাচারকারীরা ভালো মানুষ হলে অবৈধ টাকা দেশেই রাখত, বিদেশে পাচার করতো না। দেশের বিপুল সংখ্যেক মানুষ ট্যাক্স আওতায় থাকলেও তারা দিচ্ছে না। জরিমানা না করে তাদেরকে ট্যাক্সের আওতায় আনার প্রস্তাব করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ড. মহীউদ্দন খান আলমগীর ব্যাংকিং কমিশন ও স্থানীয় সরকার কমিশন চালুর প্রস্তাব করেন।

সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দেশের ধারাবাহিক উন্নয়নের বিবরণ তুলে ধরে বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে নিন্দুকরা এখনো সমালোচনা করছেন। মীর্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব আগে সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখতেন না। কারণ চোখে অসুখ ছিলো। এখন সেই অসুখ মাথায় উঠেছে। এ বিষয়ে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।

সরকারি দলের শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বের মতো আমাদের এখানেও জিনিষপত্রের দাম কিছুটা বেড়েছে। কিন্তু সেটা কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ