লিবিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অন্তরায় সিন্ডিকেট

বাংলাদেশিদের জন্য লিবিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলেও তা ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। ঢাকাস্থ লিবিয়ান দূতাবাস সিন্ডিকেটের মাধ্যম ছাড়া পাসপোর্ট জমা ও ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ে গড়িমসি করছে। তবে, জনশক্তি রপ্তানিকারকদের সংগঠন বায়রা সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ রুখতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।

লিবিয়া উত্তর আফ্রিকার দেশ। সে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। সেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় অভিবাসন ব্যয় কম, কিন্তু বেতন-ভাতা বেশি। লিবিয়ায় ভারত,পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে বাংলাদেশের কর্মীদের চাহিদা বেশি। কারণ, বাংলাদেশিদের আইন মেনে চলা ও ভালো আচরণ করার সুনাম আছে। মুয়াম্মার গাদ্দাফির শাসনকালের শেষ সময়ে ও পরবর্তী বছরগুলোতে লিবিয়ায় অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার কারণে ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সে দেশে কর্মী পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ লিবিয়ার বিবাদমান গোষ্ঠীগুলোর কলহ দূর করার উদ্যোগ নিয়ে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়। ২০২০ সালে এটি বাস্তবে রূপ নেয়। ২০২১ সালে জিএনইউ সরকার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা লাভ করে। লিবিয়ার বর্তমান সরকার দেশ গঠনে মনোযোগী হয়ে বৈদেশিক জনশক্তি আমদানির উদ্যোগ নেয়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের ক্ষেত্রে
লিবিয়া সরকার অসাধারণ উদারতায় ভিসা দিচ্ছে।

বায়রার হস্তক্ষেপে গত রোববার (২৪ অক্টোবর) থেকে সিন্ডিকেটের বাইরে পাসপোর্ট গ্রহণ ও ভিসা ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেছে লিবিয়ান দূতাবাস। তবে, এরইমধ্যে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যেসব পাসপোর্ট জমা হয়েছে, ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের পরে সেসব পাসপোর্ট ফেরত দিতে অনৈতিকভাবে পাসপোর্ট প্রতি অতিরিক্ত অর্থ দাবি করছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো।

একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘আমি ভিসা স্ট্যাম্পিংয়ের জন্য সিন্ডিকেটের প্রভাবশালী সদস্য সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ১২টি পাসপোর্ট জমা দিই। শুরুতে স্ট্যাম্পিং বাবদ ১৫০ ডলার দেওয়ার কথা থাকলেও স্ট্যাম্পিং শেষে পাসপোর্ট আটকে রেখে অতিরিক্ত ১ হাজার ৫০০ ডলার দাবি করে ওই এজেন্সি। এর পর শুরু হয় জটিলতা। সিন্ডিকেট পাসপোর্ট আটকে রেখে অনৈতিকভাবে টাকা দাবি করায় লিবিয়াগামী শ্রমিকরা পড়েছেন বেকায়দায়।’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে জনশক্তি রপ্তানিকারকদের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাশার বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার ৫৫ ভাগ রেমিট্যান্স। কিন্তু, পরিতাপের বিষয়, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং তার অধীন দপ্তরগুলো কেউ এর উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয় না। একটি চক্র আছে, যারা দেশের জনশক্তি রপ্তানি সেক্টরকে ধ্বংস করার জন্য তৎপর। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পদক্ষেপ নেওয়া অতি জরুরি। ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের কারণে লিবিয়ায় পুনরায় জনশক্তি রপ্তানি হুমকিতে পড়েছে। খুব শিগগিরই লিবিয়া থেকে ডেলিগেশন টিম বাংলাদেশে আসবে। তারা অল্প খরচে লিবিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়াসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিন্ডিকেটমুক্ত হলে খুবই কম খরচে বাংলাদেশের শ্রমিকরা লিবিয়া যেতে পারবেন। সোনার বাংলা কৃষি খামার রিক্রুটিং এজেন্সি জনশক্তি রপ্তানিতে মারাত্মক ক্ষতি করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার এ সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করে আসছে। ওই ১৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির বিষয়ে ইতোমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ