রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে ডেঙ্গি সংক্রমণ

দেশে অসময়ের ডেঙ্গি সংক্রমণ ক্রমেই মাথাচাড়া দিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চলতি বছরের সব রেকর্ড ভেঙে আরও ১ হাজার ৯৪ জন ডেঙ্গি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

এ বছর একদিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা এটাই সর্বোচ্চ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মঙ্গলবার ভর্তি হয়েছিলেন ৯৮৩ জন। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়ার মধ্যে নভেম্বরের প্রথম দুই দিনে ২ হাজার ৭৭ জন ডেঙ্গি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলেন।

এছাড়া এডিস মশাবাহিত এই রোগে গত একদিনে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন ডেঙ্গিতে সাতজনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তাদের নিয়ে টানা দুই দিনে মৃত্যু হলো ১১ জনের।

এ বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৪০ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৫২ জনের। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গিবিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা যুগান্তরকে বলেছেন, প্রতিদিন অসংখ্য ডেঙ্গি রোগী বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। রোগীর চাপে ঢাকার কোনো হাসপাতালেই বিছানা ফাঁকা নেই। আবার বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। ফলে চিকিৎসা করতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারগুলো। মূলত সঠিক প্রক্রিয়া ও কৌশল প্রয়োগ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় রেকর্ড ভাঙার দৌড়ে রয়েছে ডেঙ্গি সংক্রমণ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৩ অক্টোবর ১ হাজার ৩৪ জন এবং ৩০ অক্টোবর ১ হাজার ২০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। দেশে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও মৃত্যুর এই সংখ্যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে সারা দেশে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ রোগী ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আর ২০২১ সালে হাসপাতালে গিয়েছিলেন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ২০১৯ সালে ১৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল, যা এখন পর্যন্ত দেশে এক বছরে সর্বোচ্চ মৃত্যু। ২০২১ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১০৫ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুধবারের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত একদিনে ভর্তি রোগীদের ৬০০ জন ঢাকায় এবং ৪৯৪ জন ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ হাজার ৭৫০ ডেঙ্গি রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ২ হাজার ৩৩২ জন। অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১ হাজার ৪১৮ জন। ঢাকার বাইরে সবচেয়ে বেশি ১৪৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়।

এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগে ১৪০, ময়মনসিংহ বিভাগে ৬, খুলনা বিভাগে ৫৬, রাজশাহী বিভাগে ৬৭, বরিশাল বিভাগে ৭২ এবং সিলেট বিভাগে ৪ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। দেশে এ পর্যন্ত যে ১৫২ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৯২ জন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে এবং নরসিংদীতে একজন ও মানিকগঞ্জে একজনের মৃত্যু হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪, খুলনা বিভাগে ৬, রাজশাহী বিভাগে ২ এবং বরিশাল বিভাগে ৬ জন মারা গেছেন।

জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) কিটতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ছারোয়ার যুগান্তরকে বলেন, বর্ষাকাল এলেই ডেঙ্গি রোগের জীবাণুবাহী এডিস মশার উৎপাত বাড়ে। এ সময় এই মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গি রোগীর সংখ্যাও বাড়ে। তবে এ বছর এ রোগের প্রকোপ বেড়েছে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। এ বছর অক্টোবরে সবচেয়ে বেশি ২১ হাজার ৯৩২ জন রোগী ডেঙ্গি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মূলত মশা নিধনে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগের এবং এ কাজে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের ব্যর্থতায় ডেঙ্গি বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জানুয়ারিতে ১২৬, ফেব্রুয়ারিতে ২০, মার্চে ২০, এপ্রিলে ২৩, মে মাসে ১৬৩, জুনে ৭৩৭, জুলাইয়ে ১ হাজার ৫৭১, আগস্টে ৩ হাজার ৫২১ এবং সেপ্টেম্বরে ৯ হাজার ৯১১ জন রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সর্বাধিক ৮৬ জনের মৃত্যু হয় অক্টোবরে। এছাড়া জুনে ১, জুলাইয়ে ৯, আগস্টে ১১ এবং সেপ্টেম্বরে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ