রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদার করতে যাচ্ছেন পশ্চিমা নেতারা। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরেক দফা কঠিন পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়া হয়। হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি জানিয়েছেন, নতুন এই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে রাশিয়ার অর্থনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে টার্গেট করে। এছাড়া কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও অলিগার্কও রয়েছেন এই তালিকায়। পাশাপাশি ইউক্রেনের জন্য অস্ত্র সাহায্য বৃদ্ধির ঘোষণাও করেছে তার পশ্চিমা মিত্ররা। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এক সংবাদ সম্মেলনে সাকি বলেন, রাশিয়ার সরকারের দুর্নীতিগ্রস্থ সহযোগীরা পুতিনের এই যুদ্ধে অর্থায়ন ও সমর্থন যোগাচ্ছে। গত কয়েক দিন ধরেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য চাপ বাড়ছিল। ইউক্রেনের শহর বুচায় রাশিয়ার সেনারা বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে কথিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন তার শাস্তি হিসেবে নতুন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
যদিও বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া।
শহরটির মেয়র বিবিসিকে জানান, রুশ সেনারা অন্তত ৩২০ বেসামরিককে হত্যা করেছে। এছাড়া সেখানে পাওয়া গেছে গণকবরও, যা বিশ্বজুড়ে রুশবিরোধী মনোভাব আরও দৃঢ় করেছে। পশ্চিমা নেতারা একে যুদ্ধাপরাধ বলে আখ্যায়িত করেছে। হোয়াইট হাউজ কর্মকর্তা সাকি বলেন, রাশিয়ায় নতুন বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্রেমলিন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারবর্গসহ রাশিয়ার আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। এতে রাশিয়া অতি দ্রুত অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। সাকি আরও বলেন, রাশিয়ার বিরুদ্ধে এসব নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জি-৭ রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে রাশিয়া অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবে বলে জানান হোয়াইট হাউজের এই মুখপাত্র।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে ওয়াশিংটন নতুন করে যে নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে তার আওতায় পুতিনের দুই কন্যা ছাড়াও দেশটির সবচেয়ে বড় ব্যাংকও থাকছে। ওদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পঞ্চম দফার নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়ান কয়লা আমদানিকেও অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছে। মূলত ইউরোপের বন্দরগুলো ব্যবহার করে রাশিয়ান মালিকানাধীন জাহাজ পরিচালনা ঠেকাতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এটিই রাশিয়ার জ্বালানী খাতের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম নিষেধাজ্ঞা।
প্রতি বছর মস্কো থেকে ৪০০ কোটি ইউরো মূল্যের কয়লা কিনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জার্মানির মতো বেশ কিছু দেশ রাশিয়ার ওপরে অত্যন্ত নির্ভরশীল। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন চলমান থাকায় এসব দেশেও রুশবিরোধী মনোভার জোরালো হচ্ছে। জ্বালানীর পাশাপাশি ৪টি রুশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে ট্রানজেকশন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে কাঠ, সিমেন্ট, সামুদ্রিক খাবার ও মদ আমদানির ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে দুই দেশের প্রায় ৫৫০ কোটি ইউরো ক্ষতি হবে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিন বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি নির্মম ও দয়াহীন যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইইউকে এখন অবশ্যই পুতিন এবং তার সরকারের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনেছেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং এর আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছেন। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেয়া ভাষণে তিনি রাশিয়ার কথিত নৃশংসতার একগুচ্ছ তালিকা তুলে ধরেছেন। একটি ভিডিও উপস্থাপন করে তিনি বলেছেন যে, বেসামরিক মানুষদের রাস্তায় গুলি করে এবং ট্যাংকের চাপায় পিষ্ট করে মারা হচ্ছে। কিয়েভের কাছে বুচায় বেসামরিক নাগরিকদের দেহাবশেষ রাস্তায় পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনী দেশপ্রেমিক ইউক্রেনীয়দের খুঁজে খুঁজে হত্যা করেছে। তারা একটি পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ সকল সদস্যকে হত্যা করেছে এবং তাদের মরদেহ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে।
এদিকে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ইউক্রেনকে অস্ত্র দিতে যাচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্র। সিনিয়র চেক কর্মকর্তারা বলেছেন দেশটি ইতোমধ্যেই সোভিয়েত নির্মিত টি-৭২ মডেলের ট্যাংক ইউক্রেনকে দিয়েছেন। তবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানা সেরনোকোভা পার্লামেন্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেননি। শুধু বলেছেন যে তারা যথা সম্ভব ইউক্রেনকে সহায়তা করছেন এবং সামরিক উপকরণ দিয়ে সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও ইউক্রেনকে অস্ত্র দেয়া বৃদ্ধি করেছে। মঙ্গলবার মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন তারা ইউক্রেনকে আরও ১০ কোটি ডলারের জেভেলিন মিসাইল দেবে। এ নিয়ে ইউক্রেনে গত আগস্ট মাসের পর ৬ষ্ঠ বারের মতো অস্ত্র সাহায্য পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি এক বিবৃতিতে বলেন, নতুন অনুমোদনকৃত এই অর্থ ইউক্রেনের জরুরি চাহিদা মেটাবে। যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে মিসাইল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে এবং তারা এগুলো ব্যবহার করে তাদের দেশকে কার্যকরিভাবে রক্ষা করে চলেছে।





