মূল্যায়ন পদ্ধতি, দুর্বল ভিতে বিপর্যয়

একুশ বছর পর উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষায় এবার অন্য রকম ফল। ৪২ দশমিক ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থীই অকৃতকার্য। তাই উচ্ছ্বাসের ঝাপটা গেল দুই দশকের চেয়ে কিছুটা ধূসর। ভিত দুর্বল হওয়ায় আগের মতো এ বছরও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। একই কারণে উচ্চতর গণিত ও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়েও অনেক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। অনেক অগ্রসর শিক্ষার্থী ভালো করতে পারেনি, পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের ফল আরও নাজুক। গ্রাম ও শহরে সাফল্যের বৈষম্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে প্রকট হয়েছে।

পাবলিক পরীক্ষায় সব সময় দ্যুতি ছড়ানো রাজধানীর ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবার ফেল করেছে, যা ৩০ বছরের মধ্যে রেকর্ড। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর ফলও এবার খারাপ। ঢাকা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সাতটিতে পাসের হার ৫০ শতাংশের নিচে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম পাস করেছে গোপালগঞ্জে। সেখানে পাসের হার মাত্র ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া শরীয়তপুরে ৪২ দশমিক ৪২ শতাংশ, টাঙ্গাইলে ৪৪ দশমিক ৪১, মানিকগঞ্জে ৪৫ দশমিক ৪০, রাজবাড়ীতে ৪৫ দশমিক ৯৮, মাদারীপুরে ৪৬ দশমিক ৩৮ ও কিশোরগঞ্জে পাসের হার ৪৮ দশমিক ৫০ শতাংশ।

সার্বিকভাবে পাস কমার পাশাপাশি জিপিএ ৫ প্রাপ্তিও কমেছে। শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে; বিপরীতে কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। অর্থাৎ ফলের সব সূচকই এবার নিম্নমুখী।

ফল কেন এমন হলো– এ নিয়ে শিক্ষক, পরীক্ষার্থী, অভিভাবক থেকে শুরু করে ফল তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারাও নানা বিশ্লেষণ শুরু করেছেন। কেউ কেউ বলছেন, এটিই প্রকৃত ফল। অতীতে উদারভাবে খাতা দেখার ধারাবাহিকতা থেকে বেরিয়ে এসে ‘প্রকৃত’ মূল্যায়ন শুরু হওয়ায় ফলের উল্লম্ফনে ছেদ পড়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় গত মাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে এ ধারা শুরু হয়েছে। যথাযথ মূল্যায়নের কারণে মাধ্যমিকে ফল হয়েছিল ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর উচ্চ মাধ্যমিকে এসে তা ২১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়েছে।

তবে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির এতে গলদও দেখতে পাচ্ছেন। ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী পাস করল না, এটা তো কাঙ্ক্ষিত নয়। এই বিষয়টিতে আমরা একটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েছি। তাতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, গলদ আছে; অবশ্যই গলদ আছে। সেই গলদের জায়গাগুলো ঠিক করতে হবে।’

শিক্ষা ব্যবস্থায় গলদের কথাও বলছেন অনেকে। তাদের মতে, শিক্ষাকে রাজনৈতিক সফলতা দেখানোর চেষ্টা করায় প্রকৃত শিক্ষাদানের ঘাটতি তৈরি হয়েছে।

ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দুই দশকের বেশি সময় পর এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার অনেকটাই নেমেছে। ২০০৫ সালের পর এই প্রথম পাসের হার নেমেছে ৬০ শতাংশের নিচে। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ, সেখানে এবার তা ৫৭ দশমিক ১২ শতাংশে নেমেছে, যা গত বছরের চেয়ে ১৮ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম।

শুধু পাসের হার নয়, বরং জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যায়ও দেখা গেছে বড় ধস। গত বছর যেখানে এক লাখ ৩১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ পেয়েছিল, এ বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ২১৯-এ।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে একযোগে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হয়। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নেন ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৪২ শিক্ষার্থী, যার মধ্যে পাস করেছেন পাঁচ লাখ ৯৮ হাজার ১৬৬ জন। একই সঙ্গে প্রকাশ হয়েছে মাদ্রাসা (আলিম) ও কারিগরি (ভোকেশনাল, বিএম ও ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পরীক্ষার ফলও।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ