মিন্নির জামিন আবেদন: সুযোগ আছে কি নেই যা বলছেন আইনজীবী

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কী জামিন চাইতে পারেন?

আইনজীবীরা বলছেন, দেশে আইনানুযায়ী যে কেউ জামিনের আবেদন করতে পারেন। তবে আদালতে প্রাণে দণ্ডিত কোনো আসামির জামিন পাওয়ার সুযোগ নেই বলেই তাদের মত।

গেল সপ্তাহে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মিন্নির পক্ষে এই জামিন আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছেন মিন্নির আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান। তিনি বলেছেন, আবেদনটির শুনানির দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে দুয়েক দিনের মধ্যে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিন আবেদনের বিষয়ে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘জামিন যে কেউ চাইতে পারেন। তবে জামিন দেবে না। আমাদের দেশে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে জামিন দেওয়ার চর্চা নেই।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে আইনানুযায়ী যে কেউ জামিনের আবেদন করতে পারে। তবে জামিন দেওয়ার এখতিয়ার শুধু আদালতের। এখানে আদালতের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এখন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দি রয়েছেন। মিন্নি দাঁতে ব্যথা ও নাকে পলিপসসহ নানা ধরনের অসুখে ভুগছেন বলে দাবি বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের।

মিন্নির বাবা কিশোর বলেন, ‘মিন্নি নানা ধরনের জটিলতায় ভুগছে। তাই ওর জামিনটা খুব দরকার। ওর জামিন হলে ওকে ভালো চিকিৎসক দেখানো যাবে। এছাড়া মিন্নি কারাগারে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না।’

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে ক্যালিক্স একাডেমির সামনে দিনের বেলা প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে জখম করা হয়। গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

ওই ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

রিফাতের বাবার করা মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। পরে একই বছরের ২ জুলাই পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হয়। হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

রিফাত হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতায় নাম আসার ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ। রিফাত হত্যার দুই মাসের মাথায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. হুমায়ুন কবির বরগুনার আদালতে মিন্নিসহ ২৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ছয় জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি ৬ আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেন। বাকি ৪ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

পরে নিয়ম অনুসারে একই বছরের ৪ অক্টোবর ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছে। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা জেল আপিল করে। এর পর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি খালাস চেয়ে আপিল করেন।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ