বৃত্তভাঙা ব্যাটিংয়ের পরও সর্বনাশ মুশফিক-ইবাদতে

প্রেসবক্স দিয়ে কমেন্ট্রি বক্সের দিকে যাচ্ছিলেন ওয়াসিম আকরাম। চোখে চশমা দিতে দিতে টিভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেষ করলেন স্কোর কত? স্কোর জানাতেই বললেন, ‘কাম অন, ১৭০ করো।’

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের বাঁচা মরার ম্যাচে বাংলাদেশ আরও ১৩ রান বেশি করেই থামে। ওয়াসিমের মতে ১৭০ হলে নিরাপদ! কিন্তু মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ মিস আর ইবাদত হোসেনদের শেষদিকে দিশাহীন এলোমেলো বোলিংয়ে সব শেষ হয়ে যায়।

শুরু করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ, মাঝে খেলেছেন আফিফ হোসেন আর শেষে তুলির আঁচড় দিয়েছেন মোসাদ্দেক। মাঝে যদি সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ইনিংসটা আরেকটু দ্রুতগতির কিংবা আফিফ আর কিছুক্ষণ থাকতে পারতেন, তাহলে স্কোর দুইশ পার হলেও হতে পারতো। শেষ পর্যন্ত দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১৮৩ রানে থামে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় নেমে ৪ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে জয় পায় শ্রীলঙ্কা। শেষ ওভারে মেহেদির নো বলে ম্যাচের ইতি ঘটে।

২ ম্যাচেই শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের এশিয়া কাপ। সুপার ফোর নিশ্চিত করে শ্রীলঙ্কা।

সাকিব-মোস্তাফিজরা মার খেলেও ইবাদত-তাসকিন শুরু থেকে চাপে রাখেন শ্রীলঙ্কাকে। তবে প্রথম ২ ওভারে ১৩ রান দেওয়া ইবাদত নিজের তৃতীয় ওভারে দেন ২২ রান। ডেথ ওভারে দারুণ বোলিং করে তাসকিন-মোস্তাফিজ চাপে রাখলেও ১৯তম ওভারে ইবাদত আবার দেন ১৭ রান! শেষ ওভারে ৮ রান প্রয়োজন হলেও ২ বলেই তা নিয়ে নেয় লঙ্কানরা। ৪ ওভারে ৫১ রান দেন ইবাদত। আর মেহেদী ২.২ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। তাসকিন ২৪ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।

ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া কুশাল মেন্ডিস মাত্র ২ রানেই ফিরতে পারতেন। তাসকিনের বলে এজ হয়েছিলেন তিনি, দুবারের চেষ্টায়ও সেটা তালুবন্দি করতে পারেননি মুশফিক। হতবাক তাসকিন এগোতে থাকেন তার ফিল্ডিংয়ের জায়গায়। সেই মেন্ডিস ব্যাট হাতে হয়ে ওঠান হন্তারক। অবশ্য এ জন্য তার ভাগ্যকেও ধন্যবাদ দিতে হবে। মুশফিকের ভুলের পর তার হাতেই আবার ২৯ রানে আউট হয়েছিলেন মেহেদি হাসানের বলে। সেবারও বেঁচে যান নো বলে।

এরপর ইবাদতের বলে ৩১ রানে আবার ইনসাইড এজের আবেদন করে বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার ওয়াইড দেন। শেষবার জীবন পান রানআউটে। শানাকার সঙ্গে জুটির ফিফটির পর মেন্ডিস তুলে নেন নিজের ফিফটিও। বাংলাদেশকে পেলেই যেন জ্বলে ওঠেন তিনি। ৫ ম্যাচের মধ্যে ৪ ফিফটিই যে বলে দেয় তা।

শেষ পর্যন্ত তাকে থামান মোস্তাফিজ। ততক্ষণে ৪ চার ও ৩ ছয়ে ৩৭ বলে ৬০ রান করে ফেলেন। একপ্রান্তে মেন্ডিস ঝড় তুললেও এক প্রান্তে নিয়মিত উইকেট হারাচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। নিসানকার সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ আর শানাকার সঙ্গে ৫৪ রানের জুটি ছাড়া তাদের আর কোনো জুটিই বিশের ঘর পেরোতে পারেনি। মেন্ডিস ফেরার পর শানাকা এগিয়ে নিতে থাকেন ম্যাচ। শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩৪। মেহেদিকে ৬ হাঁকানোর পরেই আউট হন শানাকা (৩৩ বলে ৪৫) ।

এশিয়া কাপের আগ থেকেই ক্রিকেটাঙ্গন সরব ছিল আগ্রাসী খেলায় নতুন শুরু নিয়ে। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একাদশেই দেখা যায় সেই নতুন শুরুর আভাস। প্রথমবারের মতো ওপেনিংয়ে নামেন সাব্বির রহমান-মেহেদী হাসান মিরাজ।

সাব্বির (৫) রান করলেও তার ব্যাট চালানোতে ছিল আগ্রাসীভাব। প্যাডল সুইপ করে খুলেছিলেন রানের খাতা। আউট হয়েছেন পুল করতে গিয়ে। আর মিরাজকে নিয়ে ধরা বাজি নিশ্চিতভাবে করেছে বাজিমাত। ২টি করে চার-ছয়ে ২৬ বলে ৩৮ রান করে থামেন মিরাজ। যা তার ক্যারিয়ার সেরা।

মিরাজের আগ্রাসী শুরুতে বাংলাদেশ পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৫৩ রান করে। যা আজকেরটিসহ ২১ ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সাকিব আল হাসান ব্যাট চালালেও শুরুর দিকে নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ১৫তম বলে পেয়েছেন প্রথম বাউন্ডারির দেখা। শেষ পর্যন্ত থামেন ২২ বলে ২৪ রান করে।

মুশফিকের ব্যাট আজও ছিল নিস্প্রভ (৫ বলে ৪)। তার আগে নামার কথা ছিল আফিফ হোসেনের। কিন্তু দুই বাঁহাতি একসঙ্গে ব্যাটিং করতে চাননি সাকিব। তাই মুশফিককে আনান ব্যাটিংয়ে। সাকিব-মুশফিক দুজনেই ফিরলে খেলার হাল ধরেন আফিফ-মাহমুদউল্লাহ। আফিফ ছিলেন আগ্রাসী আর মাহমুদউল্লাহ এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেছেন।

দুজনের জুটি থেকে আসে ৩৩ বলে ৫৭ রান। নিখুঁত টি-টোয়েন্টি ইনিংস খেলেন আফিফ। তার ব্যাট থেকে আসে ৪ চার ও ২ ছয়ে ২২ বলে ৩৯ রান। আফিফের পরের ওভারেই মাহমুদউল্লাহ ২২ বলে ২৭ রানে আউট হলে শঙ্কা জাগে ১৭০ রান তুলতে না পারার। তবে মোসাদ্দেক তা হতে দেননি। ক্রিজে এসেই হাসারাঙ্গাকে হাঁকান ২ চার। চাপমুক্ত হয়ে খেলেন শেষ পর্যন্ত। মাঝে মাহেদী এসে ফিরলেও তাসকিন দারুণ সঙ্গ দেন। শেষ ওভারে দুজনে নেন ১৭ রান।

কিন্তু এমন বৃত্তভাঙা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পরও ক্যাচ মিস আর এলোমেলো বোলিংয়ে দিনশেষে জুটলো পরাজয়ের গ্লানি। ইবাদত না হয় এই সংস্করণে নতুন কিন্তু মুশফিকরা আর কত ভুল করে যাবেন?

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ