বিবিএ’র দাবি ২৫১ কোটি রেল ১ কোটিতে সম্মত

পদ্মায় টোল নির্ধারণ নিয়ে রেলওয়ে এবং বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) দুই মেরুতে অবস্থান করছে। সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলকে বছরে সর্বোচ্চ ২৫১ কোটি টাকা দিতে হবে। রেল বলছে, ১ কোটি টাকার বেশি দিতে পারবে না। এ অবস্থায় বিষয়টি ঝুলে আছে। আগামী বছর পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের কথা রয়েছে। রেলওয়েকে পদ্মা সেতু নির্মাণ ব্যয়ের একটি অংশ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। যা টোলের মাধ্যমে আদায় করা হবে। ৩৫ বছরে ১৪০ কিস্তিতে পরিশোধ হবে এ অর্থ।

বছরে ১০৬ থেকে শুরু করে ২৫১ কোটি টাকা টোল ধরে রেলওয়েকে গত ২৮ এপ্রিল চিঠি দেয় বিবিএ। চিঠি পেয়ে রেলওয়ে একটি কমিটি গঠন করে। পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি আরও যাচাই-বাছাই করে গত ১৫ দিন আগে সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর ফিরতি চিঠি দেয় রেলওয়ে। আব্দুল জলিল বলেন, আমরা প্রতিবেদনে বলেছি, বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এজন্য প্রতিবছর রেল ১ কোটি টাকার কম বিবিএ’কে দেবে। একইভাবে পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচল করলে বছরে ১ কোটি টাকা দিতে পারবে রেল।

রেললাইন প্রস্তুত হলে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম বছর ৬ থেকে ৮টি ট্রেন যাতায়াত করবে। গড়ে ৭টি ট্রেন চললে যাওয়া-আসা মিলে হবে ১৪টি। বছরে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫১১০টি। এক একটি ট্রেনে গড়ে ৭শ যাত্রী নিলে প্রতিদিন ৯৮০০ যাত্রী চলাচল করবে। বছরে যাতায়াত করবে ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার যাত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোলের জন্য ট্রেনের প্রতি যাত্রীর কাছ থেকে ভাড়ার সঙ্গে এক টাকা বেশি নেওয়া হয়। একইভাবে পদ্মা সেতু পার হওয়ার জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়ার চেয়ে এক টাকা বেশি নেওয়া হতে পারে। সেই হিসাবে বছরে মোট যাত্রীর কাছ থেকে আদায় হবে ৩৫ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। এখান থেকে রেলের ব্যয় নির্বাহের পর টোল দেওয়া যেতে পারে।

গত ২৮ এপ্রিল বিবিএ’র চিঠিতে বলা হয়, পদ্মা সেতুর রেলওয়ে ডেক, ভায়াডাক্ট ইত্যাদি নির্মাণ বাবদ ঠিকাদারের বিল দিতে হয়েছে ৫১৮৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। যা মোট ব্যয়ের ১৭ দশমিক ০২৫ শতাংশ। এ বিল বাবদ অর্থ বিভাগকে সুদসহ পরিশোধ করতে হবে ৬ হাজার ১৯৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এছাড়া রেল অংশের ডিজাইন বাবদ এডিবির ঋণ ৪৭ লাখ ৮৪ হাজার ডলারসহ মোট ৬ হাজার ২৫২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে বিবিএকে। আগামী অর্থবছর পরিশোধ করতে হবে ১০৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এরপর ২০৪৭-৪৮ অর্থবছর সর্বোচ্চ ২৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা শোধ করতে হবে।

রেলওয়ে বিবিএ’কে ফিরতি চিঠিতে মোট ৩টি সুপারিশ করেছে। প্রথমটিতে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রতি বছর যে বিশাল অঙ্কের অর্থ টোল নির্ধারণ করা হয়েছে- তা রেলের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয় সুপারিশ-বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচলের জন্য তারা শুরুতে বছরে টোল গড়ে ৫০ লাখ টাকা এবং বর্তমানে কমবেশি ১ কোটি টাকা দিচ্ছে। এ অবস্থায় পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের জন্য বছরে সর্বোচ্চ ১ কোটি থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা দেওয়া যেতে পারে। কমিটির তৃতীয় সুপারিশটি হলো পদ্মা সেতু হয়ে ট্রেন চলাচলের জন্য যদি নির্মাণব্যয়ের ১৭ শতাংশ অর্থ দিতে হয়, তবে তা অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সরবরাহ করতে হবে। বিবিএ’র চিঠির বরাদ দিয়ে রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, পদ্মা সেতুতে রেললাইন নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা। এ টাকা বিবিএ রেলওয়ের কাছ থেকে টোলের মাধ্যমে ৩৫ বছরে আদায় করতে চাচ্ছে। এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সেতু চালু হওয়ার দুমাসে ১৩৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা টোল আদায় হয়েছে। এ সময়ে গাড়ি অতিক্রম করেছে ১০ লাখ ৪৯ হাজার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ে বাণিজ্য বিভাগের এক কর্মকর্তা বললেন, বিবিএ’র চাপে পড়ে আমরা প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বছরে ১ কোটি থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত টোল দেব। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরুর কয়েক বছর পর ট্রেনের সংখ্যা বাড়বে। এতে যাত্রী বাড়ার সঙ্গে টাকাও বাড়বে। সেই হিসাব ধরেই বিবিএ’কে ১ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে ট্রেন চলাচলের বেশ কয়েক বছর ১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে অন্য খাত থেকে টাকা এনে বিবিএ’র চাহিদা পূরণ করতে হবে। শনিবার সন্ধ্যায় রেলওয়ে মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, প্রথম দিন থেকে পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়নি । আশা করছি আগামী বছর সেতু হয়ে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে। তবে বিবিএ কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধে যে পত্র রেলকে দিয়েছে, তা পূরণ করা রেলের পক্ষে একেবারেই সম্ভব নয়। বিবিএ চাচ্ছে সেতু নির্মাণের প্রায় ১৭ শতাংশ রেলকে দিতে হবে। এ নিয়ে আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি, প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্তও হয়েছে। আমরা বঙ্গবন্ধু সেতুর মতো বছরে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করব। রেল থেকে এ টাকা দেওয়া হলে সেতুর রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়ও বিবিএ কর্তৃপক্ষ করবে। আমরা ১৫ দিন আগে বিবিএ’র দেওয়া পত্রের জবাব দিয়েছি। এখনো সেই পত্রের উত্তর পাওয়া যায়নি। চিঠির উত্তর পেলে আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ