নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নে বাবার কোলে থাকা শিশু জান্নাতুল ফেরদাউস তাসপিয়াকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি মো: রিমন ওরফে শুটার রিমন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নোয়াখালী চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
৩ নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: তৌহিদুল ইসলাম আসামি রিমনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
জবানবন্দি রেকর্ডের পর আদালতের নির্দেশে আসামিকে নোয়াখালী জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর মো: সবজেল হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আসামি রিমন হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতের কাছে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রিমান্ডে নেয়া আসামিরা হলেন- সুজন, ,সোহেল উদ্দিন, নাইমুল ইসলাম ও আকবর হোসেন।
বৃহস্পতিবার নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে চার আসামির সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত চার আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-ডিবি) সাইফুল ইসলাম চার আসামির রিমান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
তার আগে গত মঙ্গলবার রাতে হত্যাকাণ্ডের মুল হোতা সন্ত্রাসী রিমনসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-১১।
ঘটনার তিন দিন আগে রিমন ২১ হাজার টাকা দিয়ে অস্ত্র ক্রয় করেছিল বলে র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দেয়। বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় নোয়াখালী র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, তাসফিয়া হত্যা মামলার প্রধান আসামি রিমন (২৩) ও তার সহযোগী সোহেল উদ্দিন (২৪), সুজন (২৬), নাইমুল ইসলাম (২১) এবং আকবর হোসেনর (২৬) অবস্থান নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার রাতে জেলার সুবর্ণচরের চরক্লার্কে অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। এ সময় ওই সন্ত্রাসীরা র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে দুই রাউন্ড গুলি ছুঁড়লে র্যাবও পাল্টা গুলি ছুঁড়ে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে তারা পিছু হটার চেষ্টা করলে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গোলাবারুদ, একটি পিস্তল, একটি পাইপগান ও ছয় রাউন্ড গুলি জব্দ করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৩ এপ্রিল বুধবার বিকেলে বেগমগঞ্জ উপজেলার ১৪নং হাজীপুর ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের রাসেদ মিয়ার বাড়ির মৃত জানু সরদারের ছেলে সৌদি প্রবাসী মাওলানা আবু জাহের (৩৭) তার তিন বছর বয়সের শিশু মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়াকে কোলে নিয়ে স্থানীয় মালেকার বাপের দোকানে চিপস কিনে দেয়ার জন্য আসে। এ সময় শীর্ষ সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা প্রকাশ্যে গুলি চালায়। এতে মাওলানা আবু জাহের ও তার কোলে থাকা শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়া গুলিবিদ্ধ হয়।
তাদের নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে জান্নাতুল ফেরদৌস তাসফিয়ার অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকা নেয়ার পথে রাত ৯টায় জান্নাত মারা যায়। পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি এবং ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ও র্যাব এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার ।
উল্লেখ্য, নিহতের মামাতো ভাই স্থানীয় ব্যবসায়ী আবদুল্যাহ আল মামুন জানান, বাদশা ওই জায়গা থেকে ছয় ফিট মাটি কাটে। এরপর আরো মাটি কাটতে গেলে আমাদের বাড়ির লোকজন তাকে বাধা দেয়।, মাটি কাটার বিরোধের জের ধরে ১৩ এপ্রিল বিকেল ৪টার দিকে সন্ত্রাসী রিমনের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সক্রিয় সদস্য রহিম, মহিন, সুজনসহ ১০ থেকে ১৫জন অস্ত্রধারী মালকার বাপের দোকানে এলাকায় অবস্থিত আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ করে। ওই সময় আমার মামা জাহের তার শিশু মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে দোকানে আসে চিপস আর চকলেট কিনে দেওয়ার জন্য। সন্ত্রাসী রিমন আমার মামাকে আমার দোকানে দেখে গালমন্দ করে বলে তোর শেল্টারে এরা এসব করছে। এ কথা বলার সাথে সাথে আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ে এবং জান্নাতকে ইট দিয়ে আঘাত করে। এরপর মামা দোকান থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ির দিকে যাবার সময় রিমন ও তার বাহিনীর সদস্যরা পেছন থেকে পুনরায় জান্নাতকে এবং মামাকে লক্ষ্য করে গুলি করলে জান্নাতের কানে, মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় এবং মামা চোখে গুলিবিদ্ধ হন।
কিছু দিন আগে হাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হাজীপুর গ্রামের রাশেদ মিয়ার বাড়ির মো: আলম পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রামের মো: বাদশার কাছে জমির মাটি বিক্রি করেন। কয়েক দিন ধরে ওই জমি থেকে মাটি কেটে নেন বাদশা। যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা ছিল তার চেয়ে বেশি মাটি কেটে নেয় বাদশা। এ নিয়ে তাকে বাধা দিলে গত সোমবার ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়ে আলমদের ওপর হামলা চালায় বাদশা। এ সময় তাকে বাধা দিতে এলে আলমের ভাই ফিরোজের অন্তঃসত্বা মেয়ের পেটে লাথি মেরে জখম করে সন্ত্রাসীরা। এরপরও সন্ত্রাসী নিয়ে আলমদের ওপর একাধিকবার হামলা চালায় বাদশা। এসব ঘটনায় স্থানীয়ভাবে বৈঠক বসে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হয়। এ ঘটনার জেরে ১৩ এপ্রিল বিকেল চারটার দিকে ভাড়াটে সন্ত্রাসী রিমন, মহিন, আকবর, নাঈমসহ ১০ থেকে ১২ জনের একদল সন্ত্রাসী মালেকার বাপের দোকান এলাকায় এসে গুলি ছুড়লে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে।