ভারত রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা দেওয়ায় বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চিন্তাভাবনা করছেন আমদানিকারকরা। এ ক্ষেত্রে তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ১১টি দেশ। তবে এসব দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের মতে, পেঁয়াজ আমদানিতে এ মুহূর্তে বড় প্রতিবন্ধক এলসি মার্জিন ও ডলারের উচ্চমূল্য। মার্জিন কমিয়ে আনলে আগ্রহ বাড়তে পারে। এছাড়া পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হওয়ায় প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করাই নিরাপদ। দূরের দেশ থেকে জাহাজে করে আনা সময়সাপেক্ষ এবং সে ক্ষেত্রে অনেক পেঁয়াজ নষ্টও হয়ে যায়। বিকল্প দেশ থেকে আমদানির পর দেশের বাজারে কাক্সিক্ষত মূল্য পাওয়া যাবে কিনা, তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। তাই আপাতত তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশের আমদানি পেঁয়াজের বেশির ভাগই আসে ভারত থেকে। ভারত ছাড়া আর যেসব দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করেন তার মধ্যে রয়েছে চীন, মিয়ানমার, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, কাতার, ভিয়েতনাম, নেদারল্যান্ডস, থাইল্যান্ড ও মিসর।
খাতুনগঞ্জ হামিদ উল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, ‘২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি করে অনেক ব্যবসায়ী পথে বসে গেছেন। তারা পেঁয়াজ আনার পর দেখা গেল কিছু দিন পর আবার ভারত থেকে আমদানি শুরু হয়ে গেছে। উচ্চ মূল্যে আনা পেঁয়াজ তখন অনেকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ তখন নষ্টও হয়ে যায়। এবার আর সেই ভুল করবেন না আমদানিকারকরা। আগামী মার্চ পর্যন্ত ভারত রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাই ওই সময় পর্যন্ত সুযোগ পেলেও ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে না, এমন নিশ্চয়তা না পেলে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে পণ্যটি আমদানি করতে আগ্রহী হবেন না। এছাড়া পেঁয়াজ আমদানিতে এলসি খুলতে গেলে ১০০ শতাংশের বেশি নগদ মার্জিন চাচ্ছে ব্যাংগুলো। এটি ১০ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনলে আগ্রহ বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। অনেকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে বাসায় রেখে দিয়েছেন। এজন্য বেচাবিক্রিও কমে গেছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সোমবার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা ১৩০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বলেছেন।
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানির পর মূল্য পরিশোধ করতে গেলে দেখা যায়, ডলারের দাম বেড়ে গেছে। তখন লোকসানের মুখে পড়তে হয়। এটাও একটা বড় সমস্যা।
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংগনিরোধ উইংয়ের উপপরিচালক মুহাম্মদ লিয়াকত হোসেন খান যুগান্তরকে বলেন, ‘গত ৫ জুন থেকে ডিসেম্বরের এ পর্যন্ত ৬ মাসে ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ২০ লাখ আট হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে এই সময়ে আমদানি হয়েছে ৭ লাখ ১০ হাজার ৩২১ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৭ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ এসেছে ভারত থেকে। বাকি সামান্য পরিমাণ এসেছে অন্য কয়েকটি দেশ থেকে। ইস্যুকরা আমদানি অনুমতিপত্রের বিপরীতে দেশে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ৩৫ শতাংশ।’