পুলিশ ফাঁড়ির গেটে কিশোরকে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে ইমন মোল্যা (১৭) নামে এক কিশোরকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। দফায় দফায় বেধড়ক মারধর, বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা ও কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে তা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সকালে উপজেলার রামদিয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সামনেই এমন বর্বর ঘটনা ঘটে।

নির্যাতনের শিকার ইমন নিজামকান্দি ইউনিয়নের উত্তর ফলসি গ্রামের দিনমজুর ইসলাম মোল্যার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, ভ্যান চুরির অভিযোগ তুলে এলাকার মহসিন, কামরুল শেখ, টুলু শরিফ ও সিরাজ ওই কিশোরকে মারধর করে। পরে তাদের সঙ্গে আরও লোকজন ওই কিশোরকে নির্যাতন করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে মারা গেছে কিনা নিশ্চিত হতে বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেওয়া হয়। পরে মাথার চুল ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।

নির্যাতনের শিকার কিশোরের বাবা ইসলাম মোল্যা বলেন, ‘শনিবার সকালে আমার ছেলে মাছ ব্যবসায়ী আশুতোষ ও রবিনের মাছ ভ্যানে নিয়ে রামদিয়া বাজারে যায়। সেখানে গিয়ে ভ্যান থেকে মাছ নামিয়ে রেখে নাস্তা করতে যায়। নাস্তা করে ফেরার পথে মহসিনসহ কয়েকজন তাকে ভ্যান চোর বলে ধাওয়া করে। রামদিয়া বড় ব্রিজের কাছে গিয়ে তাকে ধরে নির্মমভাবে মারধর করে। পরে মহসিনের সঙ্গে কামরুল শেখ, টুলু শরিফ, সিরাজ যোগ দিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে ইমনকে নির্যাতন করে। অজ্ঞান হয়ে পড়লে বিড়ির আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। পরে ভ্যানে শুইয়ে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির গেটের সামনে নিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করে এবং কাঁচি দিয়ে মাথার চুল কেটে সে দৃশ্য ভিডিওধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়। আমি খবর পেয়ে আমার ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। আমার ছেলেকে ওদের হাত থেকে বাঁচাতে লোকজনের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি। ফাঁড়ি থেকে পুলিশ এসেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে চলে যায়। তারা আমার ছেলের ভ্যানও জোরপূর্বক আটকে রাখে। আমি প্রশাসনের কাছে এর বিচার চাই।’

পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ঘটনার কথা স্বীকার করে রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাবুল আকতার বলেন, ‘এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটেছে। চুরি করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে। তবে নিজামকান্দি ও বেথুড়ী ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ফাঁড়িতে কেউ অভিযোগ করেনি।’

এ বিষয় নিজামকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান নওশের আলী বলেন, ‘আমি বিষয়টি শুনছি যে তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। তবে তাকে ছাড়িয়ে আনার ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা চরম অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কামরুল শেখের সঙ্গে কথা হলে তিনি চুল কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘চোরের হিসাব তো চোরের সঙ্গেই করতে হয়। তাকে মারধর করা হয়নি। চড়-থাপ্পড় দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা চরম অন্যায় করেছে। কেউ আইন হাতে তুলে নিতে পারেন না। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ