দেশে জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ অব্যাহত থাকবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহের জন্য ছয় মাসভিত্তিক চুক্তি হয়ে থাকে। বর্তমান চুক্তির মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত। দেশে মজুতকৃত জ্বালানি তেল দ্বারা ৩০ থেকে ৩৫ দিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে এবং এই সময়ের মধ্যে জ্বালানি তেল নিয়ে দুটি জাহাজ দেশে এসে পৌঁছাবে অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে দেশে জ্বালানি তেল সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।

বুধবার জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে মো. শহিদুল ইসলাম বকুলের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্ব টেবিলে উত্থাপিত হয়।

জ্বালানি তেলের মজুতের তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত দেশে জ্বালানি তেলের মজুতের পরিমাণ পরিশোধিত ৬ লাখ ২০ হাজার ১৪৮ মেট্রিক টন, অপরিশোধিত ৮১ হাজার ৮৪৬ মেট্রিক টন। মোট ৭ লাখ ১ হাজার ৯৯৪ মেট্রিক টন।

কী কী জ্বালানি তেল আমদানি করা হয়- সে তথ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে পরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে ডিজেল, জেট ফুয়েল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল ও মেরিন ফুয়েল এবং অপরিশোধিত জ্বালানি তেল হিসেবে এরাবিয়ান লাইট ক্রুড ও মারবান ক্রুড অয়েল আমদানি করে থাকে।

জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, জ্বালানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে চাহিদা বিবেচনায় চলতি আগস্ট মাসে প্রায় ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল ও ৫০ হাজার মেট্রিক টন অকটেন এবং সেপ্টেম্বরে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল, ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট ফুয়েল, ৫০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল এবং ২৫ হাজার মেট্রিক টন অকটেন আমদানির সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) বর্ধিত চাহিদা বিবেচনায় আগস্ট মাসে আরও ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল এবং সেপ্টেম্বর মাসে আরও ২৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল ও ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল সরবরাহের জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে প্রক্রিয়াকরণ ও পরিশোধনের মাধ্যমে পরিশোধিত জ্বালানি তেল উৎপাদনের জন্য আগস্ট মাসে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন এবং সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন ক্রুড অয়েল আমদানি করা হবে। এ ছাড়া দেশিয় উৎস হতে জ্বালানি তেল সংগ্রহ অব্যাহত রয়েছে।

জ্বালানি সঙ্কটের কারণ সম্পর্কে সংসদ নেতা বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। জুলাই মাসে ক্রুড অয়েলের মূল্য ব্যারেল প্রতি সর্বোচ্চ ১১৭ দশমিক ৪৮ মার্কিন ডলার অতিক্রম করে।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে জ্বালানি মূল্যের পার্থক্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের ঊর্ধ্বগতির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশসহ বিভিন্ন দেশে নিয়মিত তেলের মূল্য সমন্বয় করে থাকে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে প্রতিবেশী দেশ ভারতের কলকাতায় গত ৬ এপ্রিল ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি সর্বোচ্চ ৯৯ দশমিক ৮৩ রুপি এবং পেট্রোলের মূল্য সর্বোচ্চ ১১৫ দশমিক ১২ রুপিতে উন্নীত হয়। পরবর্তী সময় শুল্ক হ্রাসের মাধ্যমে ২২ মে কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি এবং পেট্রল লিটার প্রতি ১০৬ দশমিক ৩ রুপি নির্ধারণ করা হয়, যা অদ্যবধি বিদ্যমান রয়েছে। এরপর গত ৪ আগস্টের তথ্যানুযায়ী কলকাতায় ডিজেল লিটার প্রতি ৯২ দশমকি ৭৬ রুপি বা সমতূল্য ১১৭ দশমিক ৩৪ টাকায় (১ রুপি গড় ১ দশমিক ২৬৫ টাকা) বিক্রয় হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে প্রায় (১১৭ দশমিক ৩৪-৮০ টাকা) অর্থাৎ ৩৭ দশমিক ৩৪ টাকা বেশি ছিল। এবং পেট্রল লিটার প্রতি ১০৬ দশমিক ৩ রুপি বা সমতুল্য ১৩৪ দশমিক ১৩ টাকায় পেট্রল বিক্রি হচ্ছিল যা বাংলাদেশ থেকে ১৩৪ দশমিক ১৩-৮৬ টাকা অর্থাৎ ৪৮ দশমিক ১৩ টাকা বেশি ছিল।

লোডশেডিং করে সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টার বিষয়ে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসে বাবলার এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। এদিক থেকে দেশে কোনো বিদ্যুৎ সঙ্কট নেই। বৈশ্বিক চলমান জ্বালানি সঙ্কটের কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার ও পরিকল্পিত লোডশেডিং করে সঙ্কট উত্তরণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য বিভিন্ন এলাকায় ক্ষেত্র বিশেষে এক হাজার মেগাওয়াট থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পরিকল্পিত লোডশেডিং করা হচ্ছে। পরিকল্পিত এ লোডশেডিং শিডিউল বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রাহকদের নিয়মিতভাবে আগেই অবহিত করা হচ্ছে। বর্তমানে একদিকে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত লোডশেডিংসহ হলিডে স্ট্যাগারিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিতে রাত ৮টার মধ্যে শপিংমল, দোকানপাট বন্ধ করা, এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির ওপরে রাখা, রুটিন অনুযায়ী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটি মেনে চলা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা ও আলোকসজ্জা পরিহারে গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার জ্বালানি বহুমুখীকরণের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নতুন নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করছে। এ ছাড়া বর্তমান বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবিলায় লোডশেডিং সীমিত রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আশা করা যাচ্ছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে এবং সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে অচিরেই সাময়িক লোডশেডিং থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ