ডলারের দরে ভিন্নমাত্রার ওঠানামা এখন স্পষ্ট। দেশে ডলারের চাহিদা কমতে থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক নিচ্ছে উল্টো কৌশল, নিয়মিত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে বড় অঙ্কের ডলার কিনছে। সপ্তাহের প্রথম দুই কার্যদিবসে কিনেছে ৪৮৪ মিলিয়ন বা ৪৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার। রোববার ১৭১ মিলিয়ন, আর আজ মঙ্গলবার এক দিনেই ৩১৩ মিলিয়ন ডলার।
সাধারণত বাজারে দর পড়লে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে। এখনো ঠিক তা-ই করছে। দর যেন অতিরিক্ত নিচে না নামে, সে জন্য প্রয়োজনমতো হস্তক্ষেপ চালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো যেন ক্ষতিতে না পড়ে, সেদিকেও নজর রাখছে।
এই কৌশলে একদিকে রিজার্ভে বাড়ছে ডলারের জোগান, অন্যদিকে বাজার পাচ্ছে স্থিতিশীলতার একটি স্পষ্ট বার্তা। ডলারের বাজার এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সরাসরি নজরদারিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই ডলার কেনার প্রভাব পড়েছে বাজারে। গতকাল মঙ্গলবার এক দিনে ডলারের দাম বেড়ে হয়েছে ১২১ টাকা ১১ পয়সা, যা আগের দিনের তুলনায় ১ টাকা ৪০ পয়সা বেশি। এদিন বাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১২১.৫০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১২০.৮০ টাকা, যেখানে সোমবার ছিল যথাক্রমে ১২০.১০ ও ১১৯.৫০ টাকা।
বাজার পর্যবেক্ষণে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডলারের দর যখন ‘মধ্যবর্তী’ দরের নিচে নেমে যায়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কিনে নেয়। এতে একদিকে দর পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা কমে, অন্যদিকে ব্যাংকগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাজার এখনো কিছুটা নিম্নমুখী; তবে দর সহনীয়। তাই বাজার স্বাভাবিক রাখতে ডলার কেনা হচ্ছে। ঠিক কত কিনব, তা নির্দিষ্ট নয়। প্রয়োজনে নিলামের মাধ্যমে আরও কেনা হবে।’
ডলারের বাজারে এমন অবস্থান কেন? বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘বড় অর্থ পাচারকারীরা এখন আর আগের মতো সক্রিয় নয়। কেউ জেলে, কেউ পালিয়ে। ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের প্রবাহ বেড়েছে। বাজারে এখন তেমন কোনো অস্থিরতা নেই।’
গতকাল বিভিন্ন ব্যাংক ১২০ থেকে ১২১ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। কেউ কম দামে, কেউ বেশি দামে। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক একেক ব্যাংকের কাছ থেকে একেক দামে ডলার কিনে থাকে। আর এ কারণে রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রেও একেক ব্যাংক একেক দরে ডলার নিচ্ছে, সব জায়গায় এক রেট নেই।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি দামে ডলার কিনলে বাজারে দর বাড়ে। তবে এবার বাজারে চাহিদা কম, তাই সবাই ভাবলেও ১২১ টাকার ওপরে দর যায়নি।’
সবশেষে একটি বড় পরিবর্তন হলো, গত বছর যেসব ব্যাংকের হাতে ডলার কম ছিল, এখন তাদের হাতে উদ্বৃত্ত তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ৫০ কোটি ডলারের বেশি উদ্বৃত্ত রয়েছে ব্যাংক খাতে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ দিয়েছে, যেসব ব্যাংকের ডলার বেশি, তারা যেন সংকটে থাকা ব্যাংককে সরবরাহ করে।