জাসদ নেতা হত্যায় তিন জনপ্রতিনিধিসহ ৬ আসামির যাবজ্জীবন

কক্সবাজারের মহেশখালীর জাসদ নেতা খাইরুল আমিন সিকদার হত্যার দায়ে ৩২ বছর পর তিন জনপ্রতিনিধি ও এক আইনজীবীসহ ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলা থেকে ২০ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

রাজনৈতিক বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে খাইরুল আমিনকে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ (১) আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল মামুন এ নির্দেশ দেন। রায় ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ৫ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- মহেশখালী পৌরসভার পুটিবিলা গ্রামের মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে সাবেক মেয়র সরওয়ার আজম, তার দুই ভাই উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী জহির উদ্দিন ও নাছির উদ্দিন এবং বৃহত্তর গোরকঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম, আইনজীবী হামিদুল হক ও সাধন দে। এদের মধ্যে সাধন দে পলাতক রয়েছেন।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালের ৯ এপ্রিল বিকাল ৫টার দিকে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে দুর্বৃত্তের গুলিতে খুন হন তৎকালীন জেলা পরিষদ সদস্য ও জাসদ নেতা খাইরুল আমিন সিকদার (২৮)। তিনি গোরকঘাটার হামজা মিয়া সিকদারের ছেলে। ওই দিন নিহত খাইরুল আমিনের বড় ভাই মাহমুদুল করিম বাদী হয়ে থানায় মহেশখালীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নুর বক্স, পুটিবিলার শামশুল আলম, নাসির উদ্দিন, হামিদুল হকসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন।

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ঘটনার তদন্ত করে এজাহারভুক্ত ২৫ জনসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ওই বছরের ২২ নভেম্বর। ২০০৩ সালের ২৭ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এ মামলা চলার সময়ে সাতজন আসামি মারা গেছেন।

আইনজীবীরা বলেন, ৩১ বছর আগে ২৮ বছরের যুবক খাইরুল আমিন সিকদারকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রমজান মাসে মহেশখালীর গোরকঘাটা বাজারে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলার ৪৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এটি ৩১ বছরের পুরনো মামলা। ২০০২ সালে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালে এসে শেষ হয় যুক্তিতর্ক। এরপর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষিত হলো।

রায়ের পর্যবেক্ষণের বরাত দিয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি সুলতানুল আলম বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের জের ধরে খাইরুল আমিনকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার আগের রাতে শহরের প্যানোয়া হোটেলে বসে খুনিরা পরিকল্পনা করে খাইরুল আমিনকে হত্যার। তারপর দিন ভোর ৫টায় তারা নৌপথে মহেশখালি পাড় হয়ে খাইরুল আমিনকে হত্যা করে। আদালত তার পর্যবেক্ষণে এমনটিই জানিয়েছেন।

রায়ে রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট নন দাবি করে এপিপি আরও বলেন, যদি মামলাটির বাদী চায় উচ্চ আদালতে যেতে তবে আমরা এ মামলা নিয়ে আবারো লড়ব। দীর্ঘ ১৫ বছর আমি এ মামলায় লড়ছি। যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদণ্ড ও খালাসপ্রাপ্তদের সাজা নিশ্চিত করতে বাদীপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আমি উচ্চ আদালতে যেতে চাই।

মামলার বাদী খাইরুল আমিনের ভাই মাহামুদুল করিম বলেন, এ মামলায় জহির ও ইব্রাহিম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জহিরের সাজা হলেও ইব্রাহিম খালাস পেয়েছেন। এছাড়া রায়ে আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলোতে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। তাই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পেয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ