ছাতকে বন্যায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ পা‌নিব‌ন্দি

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সুনামগ‌ঞ্জের ছাতকে বিভিন্ন নদনদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।

বৃহস্প‌তিবার সকাল থেকে সুরমা ও বটের নদীর পানি শিল্পনগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করেছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি এলাকার বানভাসি মানুষের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ।

বৃহস্প‌তিবার সকাল পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন ২৬৮, নদনদীর পানি সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ২.১৩ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

এক মাসের ব্যবধানে আবারও ও বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের মানুষ। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, মৎস্য খামার, গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও হাটবাজার। উপজেলার সর্বত্রই এখন বন্যার পানি থৈ থৈ করছে। সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত। উপজেলার সব গ্রামীণ রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের ছাতক বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যায় পা‌নি‌তে টিবও‌য়েল পা‌নির নিচে ত‌লি‌য়ে যাওয়ার ফলে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট।

ছাতকে শিল্পনগরীতে ৪ দফা ফের বন্যায় উপ‌জেলাজুড়েই বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রায় এক মাসের ব্যবধানে দু‌টি ফের বন্যায় তলিয়ে গেছে উপজেলার ১৩‌টি ইউ‌পির বিস্তীর্ণ এলাকা।

বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। ঘরের আসবাবপত্র বানের পানিতে ভেসে গেছে। বিশুদ্ধ পানি সুব্যবস্থা না থাকায় বন্যার দুর্গন্ধ যুক্ত পানি পান করতে হচ্ছে মানুষ।

অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অঘোষিতভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি মানুষের জন্য ছয়টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলার খবর পাওয়া গেছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ৫ শতাধিক বন্যাকবলিত পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। প্রতিটি আশ্রয়কেন্দ্রে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুকনো খাবার বিতরণ করার খবর পাওয়া গেছে।

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, নোয়ারাই ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ২.১৩ সেন্টিমিটার, চেলা নদীর পানি বিপদসীমার ২.১৩ সেন্টিমিটার ও পিয়াইন নদীর পানি ২.১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ডাইকি, বটেরখাল ও বোকা নদীর পানিও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমাসহ এসব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার শতাধিক ছোট-বড় সবজি বাগান। শহরের ট্রাফিক পয়েন্ট ছাড়া গোটা শহরের রাস্তাঘাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।

বেরাজপুর গ্রা‌মে আবুল কালাম ও নুরুল আমিন জানান, দু‌দিন ধরেই সাড়ে তিনশতা‌ধিক প‌রিবার-প‌রিজন বসতঘরে হাঁটুপা‌নি, ঘরে খাবার নেই। কেউ তাদের খবর নেন‌নি।

শিবনগর গ্রা‌মে বাউল ম‌নির উ‌দ্দিন নুরী জানান, বটের নদীর পা‌নি স্রোতে তাদের বা‌ড়িঘরে ঢুকেছে। তাদের টাকাপয়সাও হাতে নেই। ঘরেই খাবার নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের বৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাতিকোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মণ্ডলীভোগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ও এসপিপিএম উচ্চ বিদ্যালয়সহ ১০‌টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্র দেড় শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চলছে।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ