গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতি ‘খুনের’ কূলকিনারা হয়নি ২৫ দিনেও

গাজীপুরের চাঞ্চল্যকর শিক্ষক দম্পতি হত্যা মামলার কূলকিনারা হয়নি ২৫ দিনেও। এ ঘটনার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে। এতদিনেও হত্যারহস্য উদ্ঘাটন না হওয়ায় মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবার বিচার নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

গত ১৮ আগস্ট ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক এলাকা থেকে তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলেন— গাজীপুরের টঙ্গীর শহিদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান (৫১) তার স্ত্রী টঙ্গীর আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদা আক্তার (৩৫)।

ঘটনার প্রায় ২৫ দিন হয়ে গেলেও তাদের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন হয়নি। পাওয়া যায়নি ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা প্রতিবেদনও।

এ বিষয়ে জিয়াউর রহমানের বড় ভাই ও মামলার বাদী স্কুলশিক্ষক আতিকুর রহমান বলেন, ঘটনার শুরু থেকে কয়েক দিন পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন পুলিশের কাছে জানতে চাইলেই বলেন, ‘আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিছুটা অগ্রগতি আছে। ভিসেরার রিপোর্ট হাতে পেলে তা মিলিয়ে দেখা হবে। গত ২৫ দিন হয়ে গেছে এখন পর্যন্ত ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। সে কারণেই নাকি পুলিশ কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এতদিন হয়ে গেলেও ছোটভাই এবং তার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণ জানতে পারছি না। যার কারণে আমরা বিচার পাওয়া নিয়ে খুবই শঙ্কার মধ্যে রয়েছি। ‘

গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন বলেন, ভিসেরা প্রতিবেদন আসতে সাধারণত তিন মাস সময় লাগে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিষয়ে পুলিশ চাইলে সাত দিনের মধ্যেই ভিসেরা প্রতিবেদন আনা সম্ভব। পুলিশকে আমরা অনুরোধও করেছি, সেখানে আবেদন করার জন্য। আর ভিসেরা প্রতিবেদন ছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব নয়। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছু দিন আগে গাজীপুরে তুরাগ নদ থেকে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ আবেদন করে তার ভিসেরা প্রতিবেদন তিন দিনে নিয়ে আসে।
পুলিশ ও স্বজনরা জানান, শিক্ষক দম্পত্তি জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টঙ্গীর পাশাপাশি এলাকায়। যার কারণে প্রতিদিন তাদের প্রাইভেটকার নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। গাড়িটি জিয়াউর রহমান নিজেই চালাতেন। গত ১৭ আগস্ট সকালে স্কুলে যান এবং কাজ শেষে সন্ধ্যায় গাড়ি নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফিরে আসেননি। পর দিন ১৮ আগস্ট ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইকুল এলাকা থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরের মধ্যে নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায় পুলিশ। তাদের ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের শরীরের কিছু নমুনার ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য রাজধানী ঢাকায় সিআইডিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ঘটনার ২৫ দিন হয়ে গেলেও তাদের ভিসেরা প্রতিবেদন আসেনি। ভিসেরা প্রতিবেদন না আসায় হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনও দিতে পারছে না।

পুলিশ বলছে, ঘটনার পর থেকে সম্ভাব্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে তারা বিভিন্ন রকমের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই তারা আগের সংগ্রহ করা তথ্যগুলো আবারও ঘেঁটে দেখছেন কোথাও কিছু বাদ পড়ে গেছে কিনা। এ ছাড়া গাড়ি ও নিহতদের উদ্ধারের স্থান থেকে পাওয়া ফুটেজেও তেমন কিছু পাওয়া যায়নি।

শিক্ষক দম্পতির মৃত্যুর কারণ জানা না গেলেও তাদের স্বজনরা এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে দাবি করছেন। ঘটনার প্রায় দুদিন পর ১৯ আগস্ট রাতে নিহত জিয়াউর রহমানের বড় ভাই আতিকুর রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। সেখানে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
নিহত জিয়াউর রহমানের বড় ভাই আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনই পুলিশকে ফোন করে জানতে চাইছি নতুন করে কিছু পাওয়া গেল কিনা। কিন্তু পুলিশ কিছুই খোঁজে পাচ্ছে না। তবে পুলিশের প্রতি আস্থা আছে, তারা প্রকৃত ঘটনা খুঁজে বের করতে পারবেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক নাদির –উজ- জামান বলেন, গত বৃহস্পতিবারও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকায় সিআইডিতে কথা বলেছেন দ্রুত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। সেই প্রতিবেদন পেলে বোঝা যাবে কী হয়েছিল বা কীভাবে মৃত্যু হয়েছে। তখন অপরাধী ধরতে মুভ করা যাবে। এমনিতে আমরা যাকে সন্দেহ করেছি, তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ক্লু পাইনি। তাদের স্বজনদেরও ছাড় দেওয়া হয়নি। অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোনো ফল আসেনি। তার পরও আমারা ছেড়ে দিইনি। মামলাটা নিয়ে এখন তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। তবে আমরা সতর্ক আছি, তৎপর আছি। কিন্তু আশানুরুপ কোনো কথা বলা যাচ্ছে না।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ