হালকা পাতলা গড়নের ব্যক্তিটির নাম চার্লস শোভরাজ। ‘কুখ্যাত খুনি’ শুনলে যেমন চেহারা মনে ভেসে ওঠে, তিনি দেখতে তেমনটা নন। কিন্তু গুগলে ‘বিকিনি কিলার’ লিখে খোঁজ করলে শোভরাজের অপরাধের যে তালিকা আসে সেটি বেশ লম্বা।
ভারত, নেপাল, আফগানিস্তান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশে ডাকাতি ও খুনের অভিযোগ আছে শোভরাজের বিরুদ্ধে। বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাওয়া বিদেশি নারী পর্যটকরা। যে কারণে তিনি পরিচিতি পান ‘বিকিনি কিলার’ নামে। কিন্তু এতো খুনের পরও শোভরাজ দীর্ঘদিন অধরা ছিলেন। অপরাধের পর এক দেশ থেকে পালিয়ে আরেক দেশে গেছেন। দুইবার গ্রেপ্তার হলেও পালিয়েছেন জেল থেকে।
দুর্ধর্ষ এই অপরাধীকে ধরতে বিভিন্ন দেশের পুলিশ বাহিনী নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু ভারতের সাধারণ এক পুলিশ পরিদর্শকের (ইন্সপেক্টর) হাতে শোভরাজ ধরা পড়েন দুইবার। সেই ইন্সপেক্টরকে নিয়ে বানানো কমেডি-থ্রিলার ধাঁচের সিনেমা সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে নেটফ্লিক্সে। নাম- ‘ইন্সপেক্টর জেন্দে’।
ইন্সপেক্টর জেন্দের পুরো নাম মধুকর জেন্দে। পর্দায় তাঁর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ‘ফ্যামিলি ম্যান’ খ্যাত মনোজ বাজপেয়ী।
শুরুতে চার্লস শোভরাজের যে বর্ণনা দিয়েছি, তা পড়ে মনে হতে পারে সিনেমাটাও হয়তো ডার্ক থ্রিলারের টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। কিন্তু পরিচালক চিন্ময় মাণ্ডলেকার রোমহর্ষক ঘটনাকে পর্দায় এনেছেন হাস্যরসাত্মক উপায়ে। ফলে সিনেমার শুরুর কয়েক মিনিটেই দর্শক মনে সতর্ক সংকেত দেয়- দেখা না দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার।
সিনেমায় দেখা যায়, ১৯৮৬ সালে ভারতের দিল্লির তিহার নামের একটি কারাগার থেকে পালিয়ে মুম্বাইয়ে গেছেন শোভরাজ (পর্দায় জিম সার্ব)। ১৫ বছর আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিলেন মধুকর জেন্দে। তাই শোভরাজকে ধরতে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে আবারও ডাক পড়ে জেন্দের।
খুবই ধূর্ত এক অপরাধীকে ধরতে যখন টানটান উত্তেজনার আবহ তৈরি হয়, তখনই হাস্যরসাত্মক সাবপ্লট যোগ করেছেন পরিচালক। পুরো সিনেমার কাঠামোটাই এমনভাবে সাজানো। তাই হালকা মেজাজে দেখলে, গল্পটি ধীরে ধীরে বেশ উপভোগ্য ‘ইঁদুর-বিড়াল’ খেলার দিকে নিয়ে যায়।
জেন্দে আর শোভরাজের বুদ্ধিদীপ্ত টক্করই প্রধান আকর্ষণ। তবে সিনেমাটির প্রাণ নিঃসন্দেহে মনোজ বাজপেয়ী। একজন মধ্যবিত্ত, সাদাসিধে, কিন্তু কর্তব্যপরায়ণ পুলিশ পরিদর্শকের ভূমিকায় তিনি সাবলীল। তাঁর সূক্ষ্ম অঙ্গভঙ্গি, চোখে-মুখে বিরক্তি আর চাপা কৌতুক- চরিত্রটিকে অতিমানবীয় করেনি। অন্যদিকে, চার্লস শোভরাজের চরিত্রে জিম সর্ব নিজের স্বভাবসুলভ ক্যারিশমা বজায় রেখেছেন।
সিনেমার শেষে যখন মধুকর জেন্দের বাস্তব জীবনের ঘটনা দেখানো হয়, তখন কমেডির মোড়ক সরে গিয়ে এক শ্রদ্ধার অনুভূতি আসে। আন্তর্জাতিক অপরাধী হিসেবে পরিচিত একজনকে ধরতে ইন্সপেক্টর জেন্দের যে পরিশ্রম ও আত্মত্যাগ তা প্রশংসার দাবিদার।
অনেকে মনে করেন, কুখ্যাত খুনিকে ধরতে জেন্দের পরিশ্রমকে কমেডির মাধ্যমে দেখানোর ফলে সিনেমার গুরুত্ব কমে গেছে। এটা ঠিক যে, যারা ডার্ক ক্রাইম থ্রিলার দেখতে অভ্যস্ত, তারা হতাশ হতে পারেন। তবে পরিচালকের উদ্দেশ্য ছিল সম্ভবত বাস্তবের একজন ‘হিরো’কে রিল লাইফে কমেডি ধাঁচে উদযাপন করা।





