পুলিশের মাঠ প্রশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) পদায়নে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে নীতিমালার খসড়া পুলিশ সদরদপ্তর থেকে স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। খসড়া চূড়ান্ত হলে প্রথমবারের মতো নীতিমালা মেনে জেলা পর্যায়ে এসপি বাছাই করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই এই প্রক্রিয়া শুরুর চিন্তা রয়েছে। এর আগে গত জুলাইয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়নে নীতিমালা তৈরি হয়েছিল।
বেশ কিছু বিষয় মাথায় রেখে খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। সেখানে বলা হয়, চাকরি জীবনে অনৈতিক কাজে জড়িয়ে বা দুর্নীতির অভিযোগে শাস্তি হলে কোনো কর্মকর্তা জেলার এসপি হিসেবে বিবেচিত হবেন না। এ ছাড়া ১০০ নম্বরের একটি মানদণ্ড রাখা রয়েছে। সার্কেলের চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকার বিষয়টিও নীতিমালায় রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে জানান, সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এসপি পদায়নের নীতিমালার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এর পরই এটির প্রস্তাবনায় কোন কোন বিষয় সংযোজন করা যায়, তা নিয়ে কাজ শুরু করে পুলিশ সদরদপ্তর। এই নীতিমালা পাস হলে এসপি পদায়নের বিষয়টি একটি নির্দিষ্ট মানদণ্ডের মধ্যে আসবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, নীতিমালার খসড়া মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে আমরা। এটি পাস হলে তদবির, টাকা ও মুখ চিনে পদায়ন বন্ধ হবে। রাজনৈতিক সরকার এসে কতটুকু প্রতিপালন করবে, তার ওপর সফলতা নির্ভর করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়নের ক্ষেত্রে ‘ফিটলিস্ট’ করা হয়। তবে জেলার এসপি পদায়নের কোনো সুনির্দিষ্ট লিখিত নীতিমালা নেই। বহু বছর ধরে অনেকটা ‘ওপেন সোর্স’ বা পছন্দের তালিকা থেকে বাছাই করে এসপি পদায়ন করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের তদবির এবং পুলিশের প্রভাব বলয় থেকে বাছাই করা হয়ে থাকে। এতে অনেক যোগ্য কর্মকর্তা বঞ্চিত হন। আবার অনেক সময় পদায়নের ক্ষেত্রে পদস্থ কর্মকর্তা ও দলীয় আনুগত্য বিবেচনায় নেওয়া হয়।
সূত্র বলছে, এসপি পদায়নের প্রস্তাবনায় মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, জেলার এসপি হতে হলে সার্কেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ‘অপরাধ সার্কেল’ বলতে পুলিশের একটি প্রশাসনিক ইউনিটকে বোঝানো হয়ে থাকে। সার্কেলের প্রধান হলেন একজন এএসপি। তাকে সার্কেল অফিসার বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার অপরাধমূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ, তদন্ত এবং প্রতিরোধের জন্য তিনি দায়বদ্ধ। তার অধীন থানা বা ইউনিটগুলোর কার্যক্রম সরাসরি তদারক করেন তিনি। এই সার্কেলের কাজ হলো অপরাধমূলক ঘটনা তদন্তের ওপর সরাসরি নজর রাখা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। ন্যূনতম দুটি থানা নিয়ে একটি সার্কেল থাকে। দুটি বা তদূর্ধ্ব থানার দায়িত্বে থাকেন সার্কেল এএসপি। কাজের মধ্য দিয়ে সরাসরি জনগণের সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয় সার্কেলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার।
এর আগে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পদায়নে নীতিমালা তৈরি করা হয়। গত ৩ জুলাই পুলিশ মহাপিরদর্শক বাহারুল আলম স্বাক্ষরিত নীতিমালাটি বাস্তবায়নের জন্য সব ইউনিটপ্রধানের কাছে পাঠিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর। তবে এখনও সেটি বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না।
সেখানে বলা হয়, যারা অন্তত তিন বছর পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ও থানা ব্যবস্থাপনাবিষয়ক কোর্স সম্পন্ন করেছেন, শুধু তারাই ওসি পদে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন। ৫৪ বছরের বেশি বয়সী কর্মকর্তারা এ পদের জন্য যোগ্য হবেন না। তবে এইচএসসি বা তার চেয়ে উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদি কোনো কর্মকর্তা পরিদর্শক থাকা অবস্থায় দুইবার বা তার বেশি শাস্তি পান, কিংবা আগে বড় অপরাধের জন্য তিনবার বা তার বেশি শাস্তি পান, তবে তাকে ওসির দায়িত্ব দেওয়া হবে না।
শুধু তাই নয়, নির্বাচনের এক বছর আগে ছোট অপরাধে বা দুই বছর আগে বড় অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত হলে, তিনিও অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। পরিদর্শকদের ওসি হতে হলে পরপর পাঁচ বছরের বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদনে (এসিআর) গড়ে অন্তত ৮০ নম্বর পেতে হবে এবং টানা তিন বছর কোনো মূল্যায়নকারীর নেতিবাচক মন্তব্য থাকা চলবে না।
ওসি পদায়নের নীতিমালার ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম সমকালকে বলেন, এটি স্বাভাবিক সময়ের জন্য কার্যকর করা যাবে। সামনে নির্বাচন। এখন অনেক ওসিকেই রদবদল করতে হবে। এ সময় নীতিমালা বাস্তবায়ন কঠিন। তবে একটি মানদণ্ড তৈরি হলো– এটি স্বাভাবিক সময়ে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে।