ইসরায়েলি কারাগারে এখনো বন্দি গাজার চিকিৎসক হুসাম আবু সাফিয়া

ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধের এক বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো বন্দিদশা কাটেনি গাজার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. হুসাম আবু সাফিয়ার। যুদ্ধের আগুনে দগ্ধ গাজায় তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রোগীদের পাশে ছিলেন। সেই মানবিকতার মাশুলই যেন দিতে হচ্ছে আজও।

২০২৪ সালের প্রথম দিকে ইসরায়েলি সেনারা বারবার সতর্ক করেছিলো ড. আবু সাফিয়াকে—তিনি যেন পরিবার নিয়ে গাজা ছেড়ে যান। কিন্তু তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, রোগীদের ফেলে যাবেন না।

আল জাজিরাকে ডাক্তার হুসামের সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা জানান, ডিসেম্বর মাসে যখন ইসরায়েলি বাহিনী কামাল আদওয়ান হাসপাতাল ঘিরে ফেলে, তখন এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা ড. সাফিয়াকে ফোন করে বলেন, তাকে ও হাসপাতালের কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু সেটি ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। পরে ওই চিকিৎসককে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী।

আজও, প্রায় দশ মাস পর, তিনি বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। তার আইনজীবীর দাবি, ড. সাফিয়াকে একাকী সেলে রাখা হচ্ছে এবং তাকে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে।

যুদ্ধের আগের দিনগুলোতেও তিনি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে ভিডিও বার্তায় আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানাতেন। ড্রোন হামলায় আহত হলেও কাজ থামাননি। এমনকি আহত অবস্থাতেও তিনি চিকিৎসা চালিয়ে গেছেন।

তার স্ত্রী আলবিনা বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, যদি যেতে চাও, আমি সন্তানদের নিয়ে বের হবো, কিন্তু তুমি থাকবে না। তখন উনি বলেছিলেন—না, আমি থাকব, আমার রোগীদের পাশে।’

তাদের সংসার শুরু হয়েছিল কাজাখস্তানে, ১৯৯০-এর দশকে। ১৯৯৮ সালে পরিবারসহ গাজায় ফিরে আসেন ড. সাফিয়া। জীবনের সুখী অধ্যায় যেন শেষ হয়ে যায় ২০২৪ সালের অক্টোবরে, যখন ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তার ২০ বছর বয়সী ছেলে ইব্রাহিম নিহত হন।

আলবিনা বলেন, ‘আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন ছিল সেটি। আমার স্বামী কাঁদছিলেন, তখনই বুঝেছিলাম আমাদের ছেলেকে আর ফিরে পাব না।’

একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা, অন্যদিকে বন্দিদশায় এক মানবিক চিকিৎসক—এই দুই ছবিই আজ গাজার নিষ্ঠুর বাস্তবতার প্রতীক। ড. হুসাম আবু সাফিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক মহলে আহ্বান উঠলেও ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ