আওয়ামী লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা

শরীয়তপুরের জাজিরায় সেনের চর বি এম মোজাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মালতকে (৪৮) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। বুধবার রাত ১০টার দিকে জাজিরার খোশাল শিকদার কান্দি এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে তার ওপর হামলা করে দুর্বৃত্তরা।

পরে স্থানীয়রা আহত সাইফুল মালতকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর দেখে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হলে পথিমধ্যেই মারা যান তিনি। এ ঘটনায় জাজিরা থানা পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুজন (৩৫) নামে একজনকে আটক করেছে।

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, রাত ১১টার সময় গুরুতর আহত সাইফুল মালতকে আমাদের এখানে নিয়ে আসলে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, সাইফুল মালত জাজিরা সদর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খোশাল শিকদার কান্দি গ্রামের হাজী কিনাই মালতের ছেলে। তিনি সেনেরচর বি এম মোহাম্মেল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

তিনি জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও শরীয়তপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতিতে বিরোধের জের ধরেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছে নিহত সাইফুল মালতের বড় ভাই শামছুল হক মালত।

নিহতের স্ত্রী শামীমা ইয়াসমিন মিতু জানান, প্রতিদিনের ন্যায় জাজিরা বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন তার স্বামী। বাড়ির কাছে খোষাল সিকদারের কান্দি ব্রিজের ওপর আসলে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাকে ঘিরে ফেলে। তারা তাকে চাকু, চাইনিজ কুড়াল ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে জখম করে। আশপাশের লোকজন আসলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

তিনি জানান, স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে রাতে তিনি মারা যান।

সাইফুল মালতের সঙ্গী হিরো শেখ জানান, তারা জাজিরা বাজার থেকে সাইফুল মালতের বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে হামলাকারীরা তাদেরকে আক্রমণ করলে তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু সাইফুল মালতকে তারা কুপিয়ে জখম করে।

নিহতের মেয়ে সুমাইয়া আক্তার বলেন, আমার বাবা ২০১২ সালে জাজিরা ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করেছিলেন। সেই থেকে স্থানীয় শাহীন সিকদারদের সঙ্গে আমার বাবার বিরোধ ছিল। তার জের ধরেই তারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে। আমরা বাবার হত্যাকারীদের বিচার চাই।

নিহত সাইফুল মালতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী মিতু আক্তারসহ (৩৫)স্বজনরা আহাজারি করছে। মিতু আক্তার বলেন, আমার স্বামী আমার সন্তান দুইটারে এতিম করে চলে গেলেন।

নিহত সাইফুল মালতের একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়া(১৭) ও দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া লাবিবা (১৫) নামে দুইটি মেয়ে রয়েছে।

জাজিরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. রহমান হাওলাদার জানান, এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির কথা শুনেই আমি দেখতে এসেছি। আমি চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার করা হোক।

অপরদিকে আক্রমণকারীরা সাইফুল মালতকে আহত করার পরে সাইফুল মালতের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে আক্রমণ করে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে করে মালেক মোল্লা নামে একজনের বাড়ির কয়েকটি ঘর পুড়ে যায়।

নিহতের ভাই শামসুর রহমান মালত বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের শাস্তি চাই।

মালেক মোল্লা জানান, রাতে হামলাকারীরা আমার পাসের কয়েকটি বাড়িতে ভাংচুর করে এসে আমার বাড়িতেও ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ চালায়। এতে করে আমার দুইটি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে বিচার দাবি করবো।

জাজিরা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে প্রধান শিক্ষক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম মালতকে বুধবার রাতে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। ঢাকায় নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান । জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা খোশাল শিকদার কান্দি এলাকার আলেম ফকিরের ছেলে সুজন ফকির (২৫) নামে একজনকে আটক করেছি।

এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে ওসি জানান।

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ