৬০০ অতিথিকে খাওয়াতে পারবে না কনের পরিবার, বিয়ে ভেঙে দিলেন বর!

বরযাত্রী হিসেবে অতিথি থাকবে ৬০০ মানুষ। আর সবাইকে খাওয়াতে হবে কনের পরিবারকে। কিন্তু এতে অসম্মতি জানানোই বিয়ে ভেঙে দিলেন বর! এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করলেন কনের ভাই। আর তাতেই শোরগোল উঠেছে।-আনন্দবাজার

এ বিষয়ে আইনি প্রতিকার জানতে চেয়ে এই পোস্ট করেছেন তিনি। এমন ঘটনা ঘটেছে ভারতের একটি ছোট শহরে। কনের ভাই রেডিটে তার পোস্টের শিরোনামে লিখেছেন, ‘বিশেষ একটি যৌতুকের দাবিতে আমার বোনের বিয়ে ভেঙে দিয়েছে পাত্রপক্ষ।’ এই বিষয় নিয়ে জোর চর্চা চলতে থাকে ওই প্ল্যাটফরমে।

তিনি তার পোস্টে জানান, তার দিদির সঙ্গে এক ব্যক্তির বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে আত্মীয়সূত্রেই আলাপ হয়েছিল তাদের। কিন্তু সব কিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে শেষ মুহূর্তে খাবারের বন্দোবস্ত করা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। আর এই কারণে বিয়েই বাতিল করে দেন সেই ব্যক্তি।

পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমি ভাবিওনি যে আজ আমায় এই দিনটা দেখতে হবে। আমার দিদি এই ব্যক্তির বাগদত্তা ছিলেন। আমাদের আত্মীয়দের মাধ্যমেই এই ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের আলাপ হয়, পরিচয় হয়। আমরা খুবই ছোট শহরে থাকি, যেখানে পঞ্চায়েতরাজ এখনো তুঙ্গে। আমাদের এলাকায় দুই ভাবে মানুষের বিয়ে হয়।

তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে দুই পরিবারের মধ্যেই ঠিক হয়েছিল যে তারা তাদের অতিথিদের খাবার খরচ বহন করবেন। কিন্তু বরের পরিবার হঠাৎ করেই দাবি তোলে যে কনের পরিবারকে ৬০০ অতিথির সবার খাবারের খরচ বহন করতে হবে। আর এই হঠাৎ দাবিতে এত খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না।

তার পোস্টে আরো উল্লেখ করে লেখেন, বরের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল না। ‘বিষয়টি হলো বর নিজেরাই খুব গরিব, আমি বুঝতে পারছি না যে তারা কিভাবে এত টাকা চাইতে পারে, যা তারা নিজেরাই মেটাতে পারবে না।’ তার মতে, বর ফোনে এই বিয়ে বাতিল করে দেন। আর এই কথোপকথন রেকর্ড করা হয়। বর বলেন, ‘যেহেতু আপনি সন্ধ্যার অনুষ্ঠানের জন্য রাজি হয়ে গেছেন। এ ক্ষেত্রে আমাদের ৬০০ জন অতিথির খাবারের ব্যবস্থা করার কথা রয়েছে। তবে আমাদের কাছে এত টাকা নেই, তাই আমরা বিয়ে বাতিল করছি।’

তিনি আরো উল্লেখ করেন, বিয়ে হওয়ার কথা ছিল মে মাসে। কয়েক দিন আগে বরপক্ষকে তারা অনুরোধ করেন। তা সত্ত্বেও পাত্রের পরিবার বিয়ের এক মাস আগে বাতিলের কথা জানিয়ে দেয়। বিয়েতে টাকা খরচ করতে না পারাই এর কারণ বলে জানিয়েছে পাত্রপক্ষ। পাত্র নিজে ফোন করে জানান যে তিনি ৬০০ জন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করেছেন এবং যেহেতু কনের পরিবার তাদের খাবারের জন্য টাকা দিতে অস্বীকার করেছেন, তাই তারা এই বিয়ে বাতিল করছেন।

কনের ভাই পোস্টে লেখেন, ‘কেবল লাখ লাখ টাকা আমরা খরচ করে অতিথি সেবা করতে পারব না এবং ঋণের বোঝা মাথায় চাপাতে পারব না বলে আজ তারা এই তুচ্ছ কারণে বিয়ে বাতিল করে দিয়েছে। একটা ফোনেই এই বিয়ে বাতিল করেছেন বর।’

পোস্টে তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার মা-দিদি সর্বক্ষণ কেঁদে চলেছেন। আইনি পথে গেলে কী প্রভাব পড়বে দিদির ওপরে তার সম্মানের ওপরে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আমাদের পরিবারের সবাই। আমরা এখন কী করব? পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বিচার চাইব নাকি আইনের রাস্তায় হাঁটব?’

প্রমাণ হিসেবে, তিনি উল্লেখ করেছেন, বরের পরিবার বাগদান অনুষ্ঠানে কনেকে একটি আংটি ও শাড়ি দিয়েছিল। যেখানে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন প্রবীণ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া তাদের কাছে বরের বিয়ে বাতিল করার একটি ফোন রেকর্ডিং রয়েছে, যা তাদের মামলাকে আরো শক্তিশালী করে।

এই পোস্টের কমেন্টে অনেকেই বরের পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং কনের পক্ষকে সমর্থন জানিয়েছেন। একজন মন্তব্য করেছেন, ‘সময় থাকতে এই অর্থের বদলে বিবাহের সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন, এজন্য় কৃতজ্ঞ থাকুন। ভবিষ্যতে যদি তারা আপনার বোনকে আরো টাকার জন্য চাপ দিত, তখন আপনি কী করতেন?’

একজন লিখেছেন, ‘বিবাহবিচ্ছেদের চেয়ে বিয়ের বাগদানের পর বিয়ে ভেঙে যাওয়া অনেক ভালো।’ আরেক জন বলেছেন, ‘এই ঝামেলা থেকে বেরিয়ে আসুন।’ অন্য একজন মন্তব্য করেছেন, ‘বিবাহ বাতিলের ফলে কোনো আইন লঙ্ঘিত হয়নি। এতে কোনো অপরাধ নেই। বিবাহ অনুষ্ঠানের ধরন ও ব্যয় নিয়ে আপনার মতবিরোধ ছিল। যৌতুক প্রতিরোধ আইন অনুসারে এই খরচ যৌতুকের সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না।’

নিউজটি শেয়ার করতে নিচের বাটনগুলোতে চাপ দিন

Facebook
Twitter
WhatsApp
LinkedIn
Print

এ বিভাগের আরো খবর

ফেসবুক পেজে লাইক দিন

বিভাগীয় সংবাদ